আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি সস্ত্রীক ভারত সফরে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর মাত্র ২ দিন ভারতে কাটালেও ট্রাম্পকে খুশি করতে কোনও রকম কসুর করছে না মোদী সরকার। ওই দিনই মাত্র তিন ঘন্টার জন্যে আমেদাবাদ যাওয়ার কথা মার্কিন প্রেসিডেন্টের। তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্যে যেভাবে সেজে উঠছে আমেদাবাদ, তাতে একবারের জন্যেও মনে হবে না রাজ্য সরকারের রাজস্বে কোনও ঘাটতি রয়েছে। ইতিমধ্যেই সর্দার বল্লবভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইন্দিরা ব্রিজ পর্যন্ত যে ৫০০ কাঁচা বাড়ি সম্বলিত বস্তি এলাকা রয়েছে, তার গোটাটাই ইতিমধ্যে ৬-৭ ফুট উঁচু পাঁচিলে ঢেকে দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছে আমেদাবাদ মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন৷
প্রসঙ্গত, মোদী রাজ্য গুজরাতে ‘হাউডি মোদী’র কায়দায় ‘কেম ছো প্রেসিডেন্ট’ নামের একটি অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়েছে। তাই ট্রাম্পকে স্বাগত জানাতে যে ভাবে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে আমেদাবাদকে, তার জন্যে আনুমানিক খরচ হচ্ছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। জানা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানি নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্পকে স্বাগত জানাতে যেন কোনওভাবেই বাজেট বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। আর তাই রাস্তা সারানো থেকে শুরু করে শহরকে আরও সুন্দর করে তোলার দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছে আমেদাবাদ মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন এবং আমেদাবাদ ডেভলপমেন্ট অথরিটি। মোতেরা স্টেডিয়াম উদ্বোধন উপলক্ষ্যেই আমেদাবাদ যাবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাই স্টেডিয়াম যাওয়ার রাস্তা সাজিয়ে তুলতে কর্পোরেশনের তরফে দেওয়া হচ্ছে ৬ কোটি টাকা। আর রাস্তা সারাইয়ের জন্যে ২০ কোটি টাকা দেবে আমেদাবাদ আর্বান ডেভলপমেন্ট অথরিটি।
শুধু তাই নয়। গুজরাতের চিম্মানভাই প্যাটেল ব্রিজ থেকে মোতেরা হয়ে যে পথে জুন্দাল সার্কেলে পৌঁছবেন, তা নানা রকমের বাহারি ফুল দিয়ে সাজানো হবে। আর সেটা করতে খরচ হবে ৩ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা! আমেদাবাদ মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের তরফে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে খবর। বৃহস্পতিবারই এই সিদ্ধান্তে অনুমোদন দিয়েছে পুরনিগমের স্ট্যাডিং কমিটি। চিম্মানভাই প্যাটেল ব্রিজ থেকে মোতেরা স্টেডিয়াম পর্যন্ত সাজাতে ফুলের খরচ হবে প্রায় ১.৭৩ কোটি টাকা। অন্যদিকে বাকি অংশটুকু সাজাতে আরও ১.৯৭ কোটি টাকা খরচ হবে হবে জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, ট্রাম্পের যাত্রাপথ মনোরঞ্জন করার জন্য আলোকসজ্জার পাশাপাশি বিভিন্ন স্টেজে অনুষ্ঠানেরও বন্দোবস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গুজরাত সরকার। ফলে ‘বন্ধু’ ট্রাম্পের খাতির করতে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী কোনও রকমের ত্রুটি রাখতে নারাজ তা স্পষ্ট।
তবে একদিকে যেরকম উৎসবের রোশনাই রয়েছে, তেমনই অন্যদিকে অন্ধকারময় আরেকটি ছবিও গুজরাত থেকেই উঠে এসেছে। জানা গিয়েছে, আমেদাবাদে বিমান থেকে নামার পর যে পথ ধরে ট্রাম্প সভা স্থলে আসবেন সে পথের পাশে রয়েছে অন্তত ৫০০ ঝুপড়ি। ভারতের, সর্বোপরি আমেদাবাদের বস্তিবাসীদের দুর্দশা যাতে ট্রাম্পের চোখে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে তৎপর হয়েছে আহমেদাবাদ পুর নিগম। রাস্তার পাশে দীর্ঘ এলাকা জুড়ে তৈরি করা হচ্ছে ৭ ফুট উঁচু পাঁচিল। যার জেরে ট্রাম্পের নজরের বাইরে থাকবে ভারতের বস্তিবাসীদের দুর্দশার ছবিটা। বিদেশি অতিথি এলে এরকম জোড়াতালি দেওয়া কাজের উদাহরণ এই প্রথম নয়। এর আগে যখন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এসেছিলেন, তখনও এমনই সব কাণ্ড করেছিল গুজরাত সরকার৷