২০১৬-র ৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় দূরদর্শনে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে এলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সকলেরই চোখ তখন টেলিভিশনের পর্দায়। তারপরই হল সেই বিশেষ ঘোষণা, রাত বারোটার পর থেকে গোটা দেশে বাতিল পুরোনো পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট। মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ল দেশবাসীর। সেদিনের পর থেকে কেটে গিয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ বছর। কিন্তু তার ফলে এখনও ভুগছে দেশের আবাসন শিল্প। গোটা দেশেই আবাসনের বাজার ভালে নয়। বিক্রিবাটা যতটা হওয়ার দরকার ছিল, চলতি অর্থবর্ষেও ততটা হয়নি। সম্প্রতি এই খরা কাটাতেই ২৫ হাজার কোটি টাকার ত্রাণ ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। সেই তহবিলের সুবিধা নিয়ে চাঙ্গা হচ্ছে অন্যান্য রাজ্যের আবাসন নির্মাতা সংস্থাগুলি। শুধু বঞ্চিত হয়েছে বরাবরেই মত বাংলাই।
হ্যাঁ, ওই ফান্ড থেকে এখনও পর্যন্ত কানাকড়িও দেওয়া হয়নি রাজ্যকে। এখানকার আবাসন সংস্থাগুলির ‘অপরাধ’, রাজ্যের আইন মোতাবেক তারা কাজ করছে। আসলে আবাসন সংস্থাগুলিকে সামনে রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সঙ্গে উন্নয়ন নিয়ে নোংরা রাজনীতি করছে দিল্লী, অভিযোগ উঠেছে এমনই। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন আবাসন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে আমাদের জব্দ করতে না পেরে, কেন্দ্র ভাতে মারতে চাইছে। তারা আর্থিকভাবে বঞ্চনা করবে, এ আর নতুন কী। এটাও সেই কেন্দ্রীয় বঞ্চনারই এক উদাহরণ।
প্রসঙ্গত, বিগত কয়েক বছর ধরেই ফ্ল্যাটের বিক্রি কমে যাওয়ায় নগদ টাকায় টান পড়ে রিয়েল এস্টেট প্রকল্পগুলির। নির্মিত ফ্ল্যাট বিক্রি না হওয়ায় নির্মীয়মাণ আবাসন প্রকল্পগুলির কাজ থমকে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। টাকার অভাবে যাতে প্রকল্পগুলি বন্ধ না হয়ে যায়, তার জন্য কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানায় সংস্থাগুলি। যার ফলে বাধ্য হয়েই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ রিয়েল এস্টেটের জন্য একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেন। ২৫ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গড়া হয়, যেখানে সরকার নিজে দেয় ১০ হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ও একটি রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থাকে।
এরপর কেন্দ্র রিয়েল এস্টেট (রেগুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) অ্যাক্ট বা ‘রেরা’ নামের এক আইন আনে। ওই আইন অনুযায়ী রাজ্যগুলিকেও বিধানসভায় আইন পাস করানোর নির্দেশ দেয় কেন্দ্র। বলা হয়, প্রতিটি রাজ্যে গড়তে হবে একটি করে অথরিটি, যারা ওই আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করবে। কেন্দ্র জানিয়ে দেয়, ওই অথরিটির আওতায় থাকা প্রকল্পগুলি ফান্ডের সুবিধা পাবে। বাংলা কেন্দ্রের ওই আইনকে সামনে রেখে গঠন করে হাউসিং ইন্ডাস্ট্রি রেগুলেটরি অথরিটি বা ‘হিরা’। অভিযোগ, রাজ্য যেহেতু ‘রেরা’র বদলে ‘হিরা’ চালু করেছে, তাই কেন্দ্র ওই সুবিধা দিতে রাজি নয়।
তাতে কতটা ক্ষতি নির্মাতা সংস্থাগুলির? আবাসন সংস্থাগুলির সর্বভারতীয় সংগঠন ক্রেডাইয়ের বেঙ্গল চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট নন্দু বিলানি বলেন, গোটা দেশ যে সুবিধা পাচ্ছে, আমরা তা পেলাম না। ওই ফান্ড নির্মাতাদের উপকারে আসতে পারত। আমি ক্রেডাইয়ের তরফে কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানিয়েছি। বাজেটের আগে শিল্পমহলের পরামর্শ নিতে কলকাতায় এসেছিলেন অর্থমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। তাঁকেও আমরা বিষয়টি জানাই। তিনি আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু বাজেট পেশ হয়ে গেলেও, আমাদের আর্জি শোনা হয়নি। কেন্দ্র ইচ্ছা করলেই নিমেষে এই সমস্যার সমাধান করতে পারত। কিন্তু তারা তা করেনি। স্বভাবতই এর ফলে মোদী সরকারের বাংলা-বিরোধী মনোভাবই প্রকাশ পাচ্ছে।