এতদিন নরেন্দ্র মোদী মানেই বিজেপির কাছে ছিল মানুষের মন জয় করার ম্যাজিক। আর অমিত শাহ মানেই ‘চাণক্য’র মতো কূটনৈতিক চাল দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করা। বিজেপির এই চালু ‘মিথ’ তো ছিলই। এছাড়াও নির্বাচনী প্রচারে ধর্ম ছিল, পাকিস্তান ছিল, শাহিনবাগ ছিল। সঙ্গে ছিল গুলি-কারেন্ট। তার পরেও ঝাড়ু-ঝড়ে কেন ওলটপালট হয়ে গেল রাজধানীর পদ্মবন?
কেজরিওয়ালের পাল্টা উন্নয়নের মডেল দিতে না পারাতেই মুখ ঘুরিয়েছেন ভোটাররা, এমনটাই বলছে বিজেপির অন্তর্তদন্ত। আবার শাহ স্বীকার করেছেন, ‘দেশ কে গদ্দারো কো গোলি মারো’র মতো মন্তব্য করা উচিত হয়নি। সম্ভবত তার খেসারত দিতে হয়েছে দলকে।’ যদিও দিল্লীতে ভরাডুবির পরেও শাহিনবাগ নিয়ে নিজেদের অবস্থানে এখনও অনড় দিল্লী বিজেপি। মনোজ তিওয়ারি এখনও বলছেন, শাহিনবাগ নিয়ে বিজেপি কোনও ভুল মন্তব্য করেনি।
তাহলে এমন হার কেন? শুক্রবার ৭০ জন প্রার্থী, দিল্লীর সাংসদ ও প্রচার কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসে বিজেপি। সূত্রের খবর, হারের কাটাছেঁড়ায় উঠছে একটাই ইস্যু- উন্নয়ন। সূত্রের খবর বিজেপির অন্দরমহলের সমীক্ষা বলছে, আম আদমি পার্টির পাল্টা কোনও উন্নয়নের মডেল ভোটারদের দিতে পারেনি বিজেপি। এক তরফা জোর দেওয়া হয়েছে সিএএ-এনআরসির মতো জাতীয় ইস্যুতে। হাতিয়ার করতে চাওয়া হয়েছে ধর্মকেও।
এছাড়াও এই তথ্য উঠে এসেছে যে, ভোট সমীকরণে দিল্লীর নিজস্ব চরিত্রে নজর দেওয়া হয়নি। ২০১৪-তে দিল্লীর ৭টি লোকসভা আসনে জিতেছিল বিজেপি। কয়েক মাসের মাথায় ২০১৫-র বিধানসভা ভোটে পুরো উল্টো ছবি। ৬৭ টি আসন পায় আম আদমি দল। এবারও প্রায় একই অঙ্কের হিসেব। কিন্ত অঙ্কে কোথায় ভুল হল? বিজেপির অন্দরের খবর, ভোট ভাগাভাগির অঙ্কেও ভুল করেছিল বিজেপি। ২০১৯-এ প্রায় ২২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল কংগ্রেস। আশা ছিল, এবারও বিজেপি বিরোধী ভোট ভাগ হয়ে যাবে।
কিন্তু তা তো হয়ইনি। বরং শাহিনবাগ, জামিয়া নগরের ওখলায় ৬৪ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছে আম আদমি পার্টি। পূর্বাঞ্চলীয় ভোটের হিসেবও কাজে আসেনি। সোজা কথায়, কেজরির উন্নয়ন ও প্রতিশ্রুতির দিকে তাকিয়েই ভোট দিয়েছে রাজধানী। দলের নেতাদের বিদ্বেষমূলক মন্তব্য নিয়েও ঢোক গিলেছেন শাহ। সবমিলিয়ে বিজেপির চাণক্য এখন নিজেই স্বীকার করে নিচ্ছেন যে, ‘নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আমার পর্যালোচনায় ভুল হয়েছে।’