“The object of war is not to die for your country but to make the other bastard die for his.” — George S. Patton.
পৃথিবীর কোন সৈনিক বেঘোরে মরে গিয়ে শহীদ হতে চায় না। কেউ চায়না ইন্টেলিজেন্স এর ব্যার্থতার জন্য প্রাণ দিতে৷ তাদের বছরের পর বছর কঠোর নিয়মানুবর্তিতা মরে অমর হওয়ার জন্য না, মেরে দেশের পতাকা উঁচু করে ধরার জন্য। বন্ধ করুন এই শহীদ স্মরণ। চোয়াল শক্ত করুন। পিছনে তাকান। ক্রোনোলজিটা বুঝুন।
শ্রীনগর-অনন্তনাগ হাইওয়ে ধরে জম্মু থেকে শ্রীনগর যাচ্ছিল ২৫০০ জওয়ানের একটি কনভয়। ২৫০০ জন একসাথে একই জায়গা দিয়ে পাস করা মারাত্মক। একটা বিস্ফোরণেই ক্ষয়ক্ষতি বিপুল হতে পারে। ওরা ও জানতো কিন্তু যেতে বলা হয়েছি। গেছিল।

আটাত্তরটি গাড়ির ওই বিশাল কনভয়ই ছিল জঙ্গিদের টার্গেট। পুলওয়ামার অবন্তীপুরার কাছে কনভয় পৌঁছতেই, উলটো দিক থেকে একটি এসইউভি গাড়ি কনভয়ের কাছাকাছি চলে আসে। তারপরেই ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। এসইউভি চালাচ্ছিল এক কাশ্মীরি।
হামলার এক সপ্তাহ আগে আইবি নোট সব্বাইকে দেওয়া হয়েছিল কাশ্মীরে। সবাই মানে অবশ্যই ডাললেকের চাওয়ালা বা হাউসবোটের রাধুনিকে না। যাদের জানা উচিৎ ইন্টালিজেন্স সম্বন্ধে তাদের। সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল, যেকোন মুভমেন্টের আগে স্যানিটাইস করে নিতে হবে এলাকা কারণ আইইডি ব্যবহারের খবর আছে। স্যানিটাইস অর্থাৎ চিরুনি তল্লাশি, ধরপাকড়, এনকাউন্টার ইত্যাদি। অন্য সময় হয়, এই সময় হয়নি।

মাথায় রাখবেন, কাশ্মীরে এখন ও রাষ্ট্রপতি শাসন চলছে। কোন কাশ্মীরি দল ক্ষমতায় নেই তখনো। তাবড় উগ্রবাদী নেতাকে জেলে রাখা হয়েছে। সেনা ও আধাসেনা তৎপর। তবু ৩৫০ কেজি আইইডি শহরে ঢুকে গেল। সিআরপিএফ মুভমেন্ট সম্বন্ধে খবর পেয়ে গেল সন্ত্রাসীরা, রুট জানা হয়ে গেল। জটায়ু হলে বলতো, হাইলি সাসপিশিয়াস। আপনি বলুন, অপদার্থতা।
হামলার এক সপ্তাহ আগে Threat perception আছে জানানো হলে ও কার্যকর করা হয়নি নির্দেশ। এতে বাবুদের কোন গাফিলতি নেই। পাকিস্তান বলেছে “তাদের” কোন হাত নেই, সরকার আগেই বহুবার বলেছে আমাদের গোয়েন্দাদের কোন খামতি থাকতে নেই। কারণ দেশ মে হামারে জওয়ান মর রহে হে।বলির পাঁঠার মতো মর রহে হে।
কাট টু কাশ্মীরে ২ হিজবুল জঙ্গির সঙ্গে ডিএসপি দেবিন্দর সিং বলে একজন গ্রেফতার। জম্মু কাশ্মীর বিমানবন্দরের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। এরই নাম আফজাল গুরু বারবার নিয়েছিল। বলেছিল তাকে এই সিংই ফাঁসিয়েছে। দেবিন্দর হামলার সময় পুলওয়ামাতেই পোস্টেড ছিল। দেবিন্দরের সাথে হিজবুল জঙ্গির পুরনো সম্পর্ক ছিল। হিজবুল পুলওয়ামা হামলার দায় স্বীকার করে। ফেলুদা কিছু ভাবছো?

সিআরপিএফ ও রক্তমাংসের মানুষ। এদের ও অসহায়তা থাকে। সিনেমার মতো শেষ সিনে, সব সিনে বিজয়ী ও হয় না এরা। কখনো কখনো মরতে হয়৷ কখনো কখনো ঘুম নেমে আসে। অকারণ। দেশ তারপর এদের শহীদ বানিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটে৷
আজ বিহার, উড়িষ্যার, মনিপুরের কিংবা উত্তর প্রদেশের কোন প্রত্যন্ত গ্রামের নববধূ হোয়াটসঅ্যাপে তাঁর বরের সাথে খুনসুটি করতেই পারতো সোহাগ নিয়ে, কবে ফিরছে তার খবর নিতে। সিনেমায় যেমনটি হয়। বর কাশ্মীর সিআরপিএফ এ আছে। ৫৪ ব্যাটেলিয়ন। অন্যদিনের মতোই এক বছর আগে ২৫০০ জন জওয়ান জম্মু থেকে পুলওয়ামা যাচ্ছিল কনভয়ে। মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপনে যেমন দেখায়, সেরকমই নিশ্চই কোন ৪জি নেটওয়ার্ক এ বউ এর হাসিমুখের ছবি দেখছিল৷ এসব কিছুই হচ্ছিল ৩৫০ কেজি আইইডি ভর্তি সন্ত্রাসীদের স্করপিও গাড়িটি বিস্ফোরণের আগে। The object of war is not to die for your country but to make the other bastard die for his. কেউ বেঘোরে মরতে সীমান্তে যায় না। মারতে যায়।

এখন অবধি ৪০জন সিআরপিএফ জাওয়ান নিহত। আমরা লিখবো শহীদ। আবার হয়তো এরকম অভিশপ্ত ঘটনা ফিরে আসবে। তারপর আবার মালা দেবো, একুশ তোপের সেলামী, শান্তনা, তারপর তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটা ছায়াছবি। তা দেখে সত্যি সত্যি এপিগ্লটিসে কিছু হবে। দারুণ কাঁদবো সিনেমা হলে আর কারণে অকারণে বলবোঃ হাউস দা জোশ!
একবছর হয়ে গেল। পাহাড় প্রমাণ ইন্টেলিজেন্স এর এই ব্যার্থতার দায় কেউ স্বীকার করেনি। কারণ আমরা শহীদের চিতায় জাতীয়তাবাদের আগুন পোয়াই। টিভির পর্দায় ৪০টা পরিবারের আর্তনাদ, কান্না, ফুটফুটে মেয়ের কফিন আঁকড়ে থাকা, নববধূর অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, ঝরঝর করে কাঁদতে কাঁদতে বৃদ্ধ বাবার স্যালুট করা দেখতে ভালোবাসি।
যারা শহীদ হলো তারা বেশির ভাগ গ্রাম বা মফস্বলি মানুষ। আধা ভারতবর্ষ। ওদের পাশে একজন ফেলুদাকে দরকার, যে একটা কোল্ট রিভলবার হাতে, দাঁতে দাঁত চেপে বলবে, “যারা এদের মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করলো, যারা সাবধানবানী তোয়াক্কা করলো না, যাদের ব্যার্থতার জন্য ৪০টা তরতাজা প্রাণ শেষ হয়ে গেল, যারা নিজেরা সীমান্তে যায় না কিন্তু সীমান্ত প্রহরীদের নামে মানুষ পিটিয়ে মারে, এই সবকিছুর বদলা আমি নেবোই নয়তো গোয়েন্দাগিরি ছেড়ে দেবো।”
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত