মঙ্গলবার কেজরি লহরে পদ্মের ভরাডুবির পর যখন দিল্লীতে বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতার ছবিটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, তখন বাংলাতেও গেরুয়া শিবিরের ঝুলি থেকে বেরিয়ে অন্তর্কলহের বেড়াল। দিল্লী বিধানসভা ভোটের ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্তর একটি টুইট ঘিরে হইচই পড়ে গিয়েছে রাজ্য বিজেপির অন্দরে। দিল্লীতে দলের ভরাডুবির পর বিজেপির কী কী শিক্ষা নেওয়া উচিত তা জানাতেই একটি টুইট করেছিলেন তিনি। রাতে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সেই বিষয়গুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাও করেন। আর এতেই রাজ্যসভার এই বিজেপি সাংসদের ওপর চটেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
বিজেপির অনেকেরই মতে, স্বপনের ইঙ্গিত আসলে দিলীপের দিকে। যদিও এই বিষয়ে স্বপন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে এ নিয়ে দিলীপ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি যেমন ছিলেন তেমনই থাকবেন। তাঁর কথায়, ‘রাজনৈতিক লড়াইয়ে শত্রুর সঙ্গে যেমন ব্যবহার করতাম, তেমনই করব।’ তাঁর ‘কুকথার’ জন্য রাজ্য বিজেপির কোনও ক্ষতি হয়নি বলেও দিলীপের দাবি। কিন্ত আপনার কি মনে হয়, স্বপন আপনাকে ইঙ্গিত করেই এ সব কথা বলেছেন? দিলীপের সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘সেটা উনি-ই বলতে পারবেন।’
প্রসঙ্গত, ‘আগ্রাসী’ রাজনীতিতেই বরাবর আস্থা দিলীপের। দলের অন্দরে হামেশাই তিনি বলেন, ‘বাংলায় বিজেপি প্রধান বিরোধী দল হিসেবে উঠে এসেছে। মানুষের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে আমাদের উপর। এখন আর মিনমিন করা চলবে না। আক্রমণাত্মক হতে হবে। তাতে দলের কর্মীদের মনোবলও বাড়বে।’ দিলীপের পথে হেঁটে দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুও নিয়ম করে হুমকি দিয়ে চলেছেন বিরোধীদের। বস্তুত দিলীপের সৌজন্যেই রাজ্য বিজেপি নেতাদের ‘কুকথা’ বলার ঝোঁক এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।
এদিকে, দিল্লী ভোটে বিজেপি নেতাদের কুকথার প্রভাব ভালো ভাবেই পড়েছে। নির্বাচনী প্রচার-পর্বে প্রবেশ শর্মা, কপিল মিশ্র, অনুরাগ ঠাকুরের মতো বিজেপি নেতারা কুকথা বলে কমিশনের কাছ থেকে ভর্ৎসিত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, এঁদের সঙ্গে দিলীপ ঘোষের ‘কুকথা’ও আপ তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করেছে। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যায়, দিল্লীতে গেরুয়া শিবিরের ভরাডুবির অনেকগুলি কারণের মধ্যে সেটাও একটি। আর এই কারণেই স্বপন নাম না করে দিলীপকে বিঁধেছেন বলে মত বিজেপির একাংশের।
উল্লেখ্য, মাসখানেক আগে দিলীপের গুলি করার মারার হুমকির পর নড়েচড়ে বসেছিল দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সরাসরি দিলীপের বিরোধিতা করে টুইট করেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। সেই টুইট লাইক করে বাবুলকে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছিলেন স্বপন। দিলীপের হুমকির রাজনীতির বিরোধিতা তখন থেকেই করে চলেছেন তিনি। তবে এবার তাঁর কীর্তিতে যে বেশ ভাল মতই চটেছেন দিলীপ, তা তাঁর মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট।