দিল্লীর ভোটের আগে পালা করে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ-সহ প্রায় ২০০-র ওপর সাংসদ, ৭০ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রচার করিয়েছিলেন বিজেপির হয়ে। প্রায় সকলের ভাষণেই উঠে এসেছিল উগ্র হিন্দুত্ব বা তথাকথিত জাতীয়তাবাদের কথা। কিন্তু ভোটের ফলই বলে দিচ্ছে, এবার আর কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্বের তাস। এদিকে সামনে বিহারের বিধানসভা ভোট। আর ঠিক পরের বছর, ২০১২-এ বাংলায়। দুটি রাজ্যের পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা। কিন্তু বিজেপি হিন্দু-মুসলিম ও জাতীয়তাবাদের চেনা প্রকরণে ভরসা রাখতে পারছে না। রণকৌশল নিয়ে নেতাদের মধ্যে মতের ফারাকও দেখা দিয়েছে।
বাংলা নিয়ে একটু বেশিই চাপে গেরুয়া শিবির। শীর্ষ নেতাদের একাংশ মনে করছেন, রণকৌশলে বদল আনা দরকার। বঙ্গ বিজেপির নেতারাও বলছেন, ‘হিন্দুত্ব’ বিজেপির নতুন মতাদর্শ নয়। বিজেপির দলীয় ইস্তাহারে দীর্ঘদিন ধরেই আছে রামমন্দির নির্মাণ, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি এবং ৩৭০ ধারার অবলুপ্তির কথা। অমিত শাহ দলের সভাপতি থাকাকালীন বিষয়গুলির বাস্তবায়ন হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, ভোটের সময় কীভাবে এগানো দরকার।
আবার আরএসএসের অনেকেও মনে করেন, উত্তরপ্রদেশ আর দিল্লী এক নয়। বাংলা তো নয়ই। বাংলায় শতকরা ৩০ মুসলিম ভোট। যেখানে দিল্লীতে তা ১০ থেকে ১২ ভাগ। গত লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্য থেকে ১৮টি আসন পাওয়ার পর গেরুয়া শিবির ভেবেছিল বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এখানেই সবচেয়ে বেশি কার্যকর হবে। কিন্তু তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে এই ইস্যুর বিরোধিতা করার পাশাপাশি উদ্বাস্তু হিন্দুদেরও তাঁর আন্দোলনে সামিল করেছেন, তা চিন্তায় ফেলেছে বিজেপিকে।
কেজরিওয়াল ভোটের আগে শুধু হনুমান চাল্লিশা পাঠ করে ক্ষান্ত দিলেও মমতাকে বরাবরই দেখা যায় দুর্গাপুজোর উদ্বোধনে বা সভায় চণ্ডীপাঠ করতে। এমনকী নিউটাউনে রামকৃষ্ণ মিশনের মূল্যবোধ অধ্যয়নের জন্য নতুন সংস্থা গঠনে জমি দেওয়া থেকে শুরু করে বাগবাজারে মায়ের বাড়ির সামনে বসবাসকারী মানুষদের পুনর্বাসনের সমস্যা সমাধানের চেষ্টাও করেছেন তিনি। তাই একুশের বিধানসভায় মমতার বিরুদ্ধে হিন্দুত্বের তাস যে খাটবে না, তা বুঝতে পেরেই রাজ্য বিজেপি নেতারা এখন বলছেন, দলের উচিত প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে বাংলায় উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া।