বুধবার সাংবাদিকদের সামনে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ জানিয়েছিলেন, ‘অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করবে।’ কিন্তু গতকালই অর্থনীতির একটি প্যাথলজিক্যাল রিপোর্ট প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দফতর। যাতে ভারতীয় অর্থনীতির আরও করুণ অবস্থা সামনে এসেছে। একদিকে পণ্য-পরিষেবার ভয়াবহ মূল্যবৃদ্ধির হাতছানি। অন্যদিকে শিল্পোৎপাদনে ধীরগতির শঙ্কা। কেন্দ্রের প্রকাশিত রিপোর্টে ভারতীয় অর্থনীতির এমনই জোড়া ধাক্কার চিত্র ফুটে উঠেছে, অর্থনীতির ভাষায় যে অবস্থাকেই বলা হয় ‘স্ট্যাগফ্লেশন’।
শুধু তাই নয়। গতকাল বিগত ৬ বছরের মধ্যে খুচরো মুদ্রাস্ফীতির হার সর্বোচ্চ অঙ্কে পৌঁছল। আবার সরকারি ভাবে প্রকাশিত রিপোর্টেও এই তথ্য উঠে এল যে, ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত মুদ্রাস্ফীতির হার আরও বেড়েছে। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দফতরের ওই তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর মাসে দেশের ২৩টি শিল্পক্ষেত্রের মধ্যে ১৬টিতেই উৎপাদন কমেছে। যার ফলে, ডিসেম্বর মাসে দেশের মোট শিল্পোৎপাদন কমেছে ০.৩ শতাংশ।
উল্লেখ্য, আগস্ট মাস থেকেই দেশের বিভিন্ন কলকারখানায় শিল্পোৎপাদন নিম্নমুখী। কেবল নভেম্বর মাসে ওই সূচক ১.৮ শতাংশ বৃদ্ধি দেখিয়েছিল। নভেম্বরে শিল্পোৎদন বৃদ্ধি দেখে সকলেই ভেবেছিলেন ডিসেম্বরেও কলকারখানায় উৎপাদন বাড়বে। কিন্তু, বুধবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দফতরের রিপোর্টে সেই আশা ফুৎকারে নিভে গিয়েছে।
ডিসেম্বরে ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রে উৎপাদন কমেছে ১.২ শতাংশ। শুধু তাই নয়, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন কলকারখানায় উৎপাদন ক্ষমতার ব্যবহারও কমেছে। কলকারখানাগুলি এখন তাদের পূর্ণ ক্ষমতার মাত্র ৬৯.১ শতাংশ ব্যবহার করে উৎপাদন করছে। গত বছর এপ্রিল-জুন পর্বে ওই ক্ষমতার ব্যবহার ছিল ৭৩.৬ শতাংশ। উৎপাদন কমলে কর্মী ছাঁটাই হবেই সন্দেহ নেই। সেই সঙ্গে, কলকারখানায় অব্যবহৃত উৎপাদন ক্ষমতা বাড়লে শিল্প সংস্থাগুলি শীঘ্র নতুন বিনিয়োগের পথে হাঁটবে না।
এপ্রিল-ডিসেম্বর পর্বে খনি, ম্যানুফ্যাকচারিং ও বিদ্যুৎ শিল্পে উৎপাদন বেড়েছে যথাক্রমে ০.৬ শতাংশ, ০.৫ শতাংশ এবং ০.৮ শতাংশ। শিল্পোৎপাদনের এই পরিসংখ্যানে নতুন করে উদ্বেগ বাড়তে শুরু করেছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। কেননা, গত ডিসেম্বর থেকেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে প্রমাদ গুণতে শুরু করেছে গোটা বিশ্ব। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে মূল্যবৃদ্ধির হার ২০১৪ সালের মে মাসের পর সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। ডিসেম্বরে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল ৭.৩৫ শতাংশ। গত মাসে তা আরও বেড়ে হয়েছে ৭.৫৯ শতাংশ।
উল্লেখ্য, আগামী মাসে জানা যাবে সর্বশেষ ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধি হার কত হবে। তবে সরকার আশঙ্কা করছে, তা পাঁচ শতাংশের কম হবে। ডিসেম্বর মাসের পর ফেব্রুয়ারি মাসের মানিটারি পলিসি কমিটির বৈঠকেও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট অপরিবির্তত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ বিগত বছর একটানা রেপো রেট বৃদ্ধির পর, আচমকা রাশ টানতে বাধ্য হয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কারণ, মুদ্রাস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে। এই উভয় সঙ্কটে নতুন বছরেও অর্থনীতির জন্য আপাতত কোনও সুখবর যে আসছে না, তা নিশ্চিত।