এ যেন উলট পুরাণ! এতদিন নরেন্দ্র মোদী মানেই বিজেপির কাছে ছিল মানুষের মন জয় করার ম্যাজিক। আর অমিত শাহ মানেই ‘চাণক্য’র মতো কূটনৈতিক চাল দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করা। কিন্তু এই ‘মিথ’ এবার হয়তো ভাঙতে চলেছে। কারণ লোকসভা ভোটের পর থেকে কোনও রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনেই কাজ করছে না মোদী-শাহ জোড়া ফলা। যেমন দিল্লীর ক্ষেত্রেও চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেননি মোদী-শাহ। মোদীর পাশাপাশি প্রচারের ময়দানে অল্প দিনে ৩৫ টি জনসভা করে দিল্লী কার্যত চষে ফেলেছিলেন অমিত শাহ। তাঁদের যোগ্য সঙ্গ দিয়ে গিয়েছেন ২০০-র ওপর সাংসদ, কেন্দ্রের ৭০ জন মন্ত্রী, বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
তা সত্ত্বেও কেজরি ঝড়ে কার্যত ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেল বিজেপি। এতবড় ধাক্কা সাম্প্রতিককালে খায়নি গেরুয়া শিবির। প্রসঙ্গত, ভোটের পরে জোট ভেঙে শিবসেনা চলে যাওয়ায় মহারাষ্ট্র সরকার হাতছাড়া হয়েছে। মহারাষ্ট্রেও একা গরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। ছত্তিশগড়ে সরকার হারিয়েছে। কিন্তু সব জায়গাতেই বিজেপি লড়াই করেছে। দিল্লিতে কিন্তু কিছুই বলার নেই তাদের। শাহিনবাগ, গদ্দারোঁকো গোলি মারো, অরবিন্দ কেজরিওয়াল দেশদ্রোহী, এমন নানা প্রচারের মাধ্যমে দিল্লির ভোটের উত্তাপ, গুরুত্ব শতগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল মোদী-শাহের দল। বিভাজনের সেই রাজনীতিই শুধু ব্যর্থ হল না, দিল্লীতে একেবারে বেআব্রু হয়ে গেল বিজেপি।
খুব স্বাভাবিক যে, মঙ্গলবার দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গের বিজেপির সদর দফতর সারাদিন খাঁ খাঁ করেছে। দু’দিন আগেই বুথফেরত সমীক্ষাকে হেলায় উড়িয়েছিলেন বিজেপি নেতারা। মঙ্গলবার সকালেও তাঁরা জোর গলায় দাবি করছিলেন, সরকার নাকি তাঁরাই গড়বেন। দিনের শেষে ৮টি আসন পেতেই কালঘাম ছুটল সেই বিজেপির। সদর দফতরের চেহারা দেখে বোঝা গেল না বিধানসভা নির্বাচনের ফল আজ! শুনশান অফিসে হাতেগোনা কয়েক জন। তাঁদের চোখে-মুখে হতাশা আর বিষণ্ণতা। ১৪, পণ্ডিত পন্থ মার্গের রাজ্য বিজেপি দফতরেও ছবিটা একই। লোকজন নেই।
সংবাদমাধ্যমের ‘বাইট’ দেওয়ার জন্য অস্থায়ী মিডিয়া সেন্টারে বিজেপি মুখপাত্ররা অবশ্য ছিলেন। সম্বিত পাত্র, শাহনওয়াজ হোসেন, জি ভি এল নরসিমা রাওরা পালা করে বলছেন সেখানে। বিজেপির এক মুখপাত্র তো বলেই ফেললেন, কেজরিওয়ালের ফ্রি সার্ভিসের কাছেই হেরে গেলেন তাঁরা। গত একমাসে বিজেপির প্রচারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন শাহ। নামিয়েছিলেন ২৪০ সাংসদ-সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের। প্রধানমন্ত্রী নিজে সভা করেছেন। সে সব ব্যর্থ হওয়ার পর তাৎপর্যপূর্ণ ছিল শুধু দফতরের মূল ফটকের পাশে একটি পোস্টার। তাতে বিজেপির প্রাক্তন সভাপতির ছবির ওপর লেখা, ‘জয়ে যেমন আমরা অহঙ্কারী হই না, তেমন পরাজয় নিয়েও আমরা ভীত নই।’
অবশ্য বিজেপির এই করুন হালের পিছনে বেশ কিছু কারণকে তুলে ধরেছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রথমত, ৫ বছরের ক্ষমতায়নে কেজরিওয়ালের উন্নয়ন মূলক একের পর এক কাজ। বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, মহিলাদের বাস ও মেট্রো ফ্রি, শহর জুড়ে নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা। যমুনা বাঁচাও প্রকল্পের মতো উল্লেখযোগ্য দিকগুলি। আগামী দিনে দিল্লীকে আরও সমৃদ্ধ করতে কেজরির প্রতিশ্রুতিগুলিও অন্যতম। অন্যদিকে বিজেপির হাতে ছিল শাহিনবাগ। সিএএ বিরোধী এই মঞ্চকে হাতিয়ার করে একের পর এক কুকথার ফুলঝুরি ছুটিয়েছিল বিজেপি নেতারা। তবে দিল্লীর ফল বলছে, বিজেপির এ হেন কুকথাকে ভাল চোখে দেখেনি দিল্লীবাসী।