শীর্ষ আদালতের দায়িত্ব সংবিধানকে রক্ষা করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হল, সুপ্রিম কোর্টের প্রাথমিক পদক্ষেপ খুবই রক্ষণশীল। সুপ্রিম কোর্ট এমন ভাবে আচরণ করছে, যাতে তাকে সরকারের থেকে আলাদা করা যাচ্ছে না। এবার এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন দিল্লী হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এ পি শাহ। গণতান্ত্রিক নেতারাই গণতন্ত্র ধ্বংস করেন। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকেই কাজে লাগানো হয়। ভারতেও এখন সেই ধারা দেখা যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
তাঁর মতে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বা নির্বাচন কমিশন, এর উদাহরণ। সিবিআই বা পুলিশকে বিরোধীদের হেনস্থা করার কাজে লাগানো হচ্ছে। বিদ্বেষমূলক মন্তব্য রুটিন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরপরই সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রাক্তন বিচারপতি বলেন, শীর্ষ আদালতের দায়িত্ব সংবিধানকে রক্ষা করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হল, সুপ্রিম কোর্টের প্রাথমিক পদক্ষেপ খুবই রক্ষণশীল। সুপ্রিম কোর্ট এমন ভাবে আচরণ করছে, যাতে তাকে সরকারের থেকে আলাদা করা যাচ্ছে না।
এখানেই না থেমে ‘স্বাধীনতার জন্য লড়াই: একবিংশ শতাব্দীতে সুপ্রিম কোর্ট’ শীর্ষক বক্তৃতায় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক যাবতীয় রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি মনে করান, সুপ্রিম কোর্টের পরিচালনাতেই আসামে এনআরসি হয়। তাঁর যুক্তি, নাগরিকত্ব সব অধিকারের উপরে। অনুপ্রবেশের তত্ত্ব ভুল। অনুপ্রবেশকারী বলে চিহ্নিত ১৯ লক্ষ মানুষের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠই হিন্দু। অনেকেই আদিবাসী। মাত্র ৬ লক্ষ মুসলিম। শাহর মতে, ‘আসামে আদালতই এনআরসি করিয়েছে। তাই এখন আদালতে গিয়ে লাভ নেই। সে দরজা বন্ধ।’
ডিটেনশন শিবির নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘বিচারপতি গগৈ প্রশ্ন করেছিলেন, ডিটেনশন শিবিরে কত জন রয়েছে? ৯০০ জন শুনে চটে গিয়ে বলেছিলেন, মাত্র ৯০০? মৌলিক অধিকারের জন্য আদালতের থেকে এ কথা শোনার পরেও বিশ্বাস করা যায়, এই আদালত অধিকারের জন্য?’ প্রধান বিচারপতি গগৈয়ের আমলে সরকারের সুপ্রিম কোর্টকে মুখবন্ধ খামে তথ্য দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। নির্বাচনী বন্ড নিয়েও সুপ্রিম কোর্টের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
এর পাশাপাশি অযোধ্যা রায় নিয়েও প্রশ্ন তুলে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বলেন, প্রধান বিচারপতি হিসেবে গগৈয়ের বেঞ্চের এই রায় কে লিখেছেন, তা রায়ে বলা হয়নি। তাঁর কটাক্ষ, ‘রায়টা ইউনানিম্যাস ছিল, কিন্তু অ্যাননিমাস ছিল। আদালত কার্যত দোষীকেই পুরস্কৃত করেছে। মসজিদ ভাঙা দোষ হলে জমি কী করে হিন্দুদের কাছে যায়?’ মুসলিমদের অযোধ্যা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ৫ একর জমি দেওয়াকে ‘অপমানজনক’ বলেই মনে করেন তিনি। জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ রদের পর মানুষের স্বাভাবিক জীবনে বাধানিষেধ, ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার বিষয়েও সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শাহ।