সোমবার বিধানসভায় ২০২০-২১ সালের রাজ্য বাজেট পেশ করেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। ২০২১ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। যদিও জিএসটি বা পণ্য পরিষেবা কর চালু হওয়ায় বিভিন্ন পণ্যে করের হার বাড়ানো-কমানোর ক্ষমতা রাজ্য সরকারগুলির হাত থেকে চলে গেছে পণ্য পরিষেবা পর্ষদের হাতে। এবং তারপর থেকে রাজ্য বাজেটে মূলত লক্ষণীয় থেকে গেছে কোন খাতে কত টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন বাধ্যবাধকতার পরও উন্নয়নের লক্ষ্যে দরাজ ঘোষণা করতে দেখা গিয়েছে অর্থমন্ত্রীকে।
আপাতভাবে ২০২০-২১ সালের রাজ্য বাজেটের দুটো বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। এক, ৩ মাসে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন যাঁরা, তাঁদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্যে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা। এবং দুই, খুব ছোট, ছোট আর মাঝারি শিল্পোদ্যোগ স্থাপনে উৎসাহ দিতে রাজ্যে ১০০টি এমএসএমই পার্ক চালু করার জন্যে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা। ঘরে কোনও মতে আলো জ্বালানো গরিব মানুষকে বিনা পয়সায় বিদ্যুৎ সরবরাহের ভাবনা যেমন নিঃসন্দেহে সাহসী পদক্ষেপ। তেমনি উপযুক্ত প্রশাসনিক উদ্যোগ নিতে পারলে সমাজের দরিদ্রতম অংশে হুকিং করে বিদ্যুৎ চুরির প্রবণতাও ব্যাপক কমার কথা। তাতে শুধু যে গরিব মানুষের উপকার, তা-ই নয়। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির হিসেবের খাতাও অনেকটা ধোপদুরস্ত হয়ে ওঠার কথা। ফলে সামগ্রিকভাবে রাজ্য অর্থনীতিরই উপকার।
আর নতুন ১০০টি এমএসএমই পার্ক চালুর ভাবনা বাংলার মতো রাজ্যের পক্ষে যতটা যথাযথ, ঠিক ততটাই জরুরি। রাজ্যে নতুন বড় শিল্প তেমনভাবে আসছে না বলে রাজ্য সরকারের চেষ্টাকে কেউ গালমন্দ করতেই পারেন। কিন্তু বাস্তব হল, মোদী সরকারের আর্থসামাজিক নীতিতে শুধু বাংলা নয়, বড় শিল্পে নতুন বিনিয়োগ আজ দেশের কোনও রাজ্যই আর দেখতে পাচ্ছে না। কিন্তু এই ঝিমিয়ে পড়া জমানাতেও বিনিয়োগ থেমে নেই খুব ছোট, ছোট আর মাঝারি শিল্পোদ্যোগে। এই সব উদ্যোগই আজ অর্থনীতির চালিকাশক্তি। ভাবলে আশ্চর্য হতে হয়, দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৮৫ শতাংশ থেকে ৯৩ শতাংশ পর্যন্ত এখন আসছে অসংগঠিত ক্ষেত্রের এই সব ছোট আর মাঝারি উদ্যোগ থেকেই। বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলায় এই ছোট আর মাঝারি কারখানা কিন্তু হুহু করে বেড়েছে। কারণ, এখানে যেমন চাহিদা আছে, তেমনি আছে দক্ষ শ্রমিকও।
রাজ্যের ৫৪ লক্ষ ছোট–মাঝারি শিল্পোদ্যোগে আজ কাজ করেন বিপুলসংখ্যক মানুষ। কিন্তু একদিকে নোট বাতিল আর অন্যদিকে অসময়ে, অপরিকল্পিতভাবে, অপটু হাতে জিএসটি চালু করতে গিয়ে এই ছোট আর মাঝারি শিল্পোদ্যোগের পুঁজির অনেকটাই স্রেফ মুছে গিয়েছে। তৈরি হয়েছে পুঁজির আকালের মতো এক গভীর সঙ্কট। এই সঙ্কট সামলাতে তৃণমূল সরকার এর আগে রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্কগুলিকে এই ক্ষেত্রটিতে ঋণ সরবরাহ বাড়াতে বলেছে। বিশেষ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রপ্তানিমুখী ছোট ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলিকে। এবার সেই পথে আরও এগিয়ে সরকার নিজেই ক্ষুদ্রশিল্পের জন্য জেলায় জেলায় বিশেষ শিল্পাঞ্চল স্থাপনে উদ্যোগী হলে পুঁজি সমস্যা খানিকটা যেমন মিটবে, আবার পাশাপাশি বাড়বে কর্মসংস্থানও।