মোদী জমানায় দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বারবারই মুখ খুলেছেন একের পর এক বুদ্ধিজীবী। এবার মুখ খুলেই বিজেপির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও প্রাক্তন রাজ্যসভা সদস্য প্রীতীশ নন্দী। বিজেপি ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর কথায়, জাতপাতের রাজনীতির চেয়েও ভয়ঙ্কর ধর্ম নিয়ে রাজনীতি। জাতপাতের রাজনীতির ক্ষতি করার ক্ষমতা কম। কিন্তু ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করোনাভাইরাসের মতো। শক্তিশালী তো বটেই। তার সংক্রমণটা হয় খুব দ্রুত। তা অপ্রতিরোধ্যও।
প্রীতীশ মনে করেন, ক্ষমতার নিরিখে জাতপাতের রাজনীতি দুর্বলই। কারণ, এ দেশে বিভিন্ন জাতের (কাস্ট) মধ্যেও যথেষ্ট বিভাজন রয়েছে। সাব-কাস্ট রয়েছে। জাতপাত-নির্ভর আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের সংখ্যা উত্তরোত্তর বেড়ে ওঠায় সেই বিভাজনরেখা গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে ক্রমশ। বিভাজন থেকেই বিরোধের সূত্রপাত হয়। ‘কলিশন’ (সংঘর্ষ) হয়। তাই জাতপাতের রাজনীতি কিছুতেই শক্তপোক্ত, মজবুত হয়ে উঠতে পারে না। ভিতরে ভিতরে তা ফোঁপরা হয়ে যায়। সাব-কাস্টগুলির রেষারেষি, ধাক্কাধাক্কিতে। এটা অতীতে বহু বার প্রমাণিত হয়েছে। আগামী দিনে আরও হবে।
প্রীতীশের মতে, এর ফলে, জাতপাতের ভোটের শতাংশের হিসাবটা এলোমেলে হয়ে যায়। কমে, বাড়ে। ধর্ম নিয়ে রাজনীতিতে যেটা একেবারেই হয় না। কারণ, কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সেই বিভাজনরেখা থাকে না বললেই চলে। ধর্মের নামে সকলকে একই দিকে ছোটানো যায়। একবগ্গা। যুক্তি-তক্কোর পরোয়া না করে। খ্রিস্টানে বড়জোর দু’টো ভাগ। ক্যাথলিক, প্রোটেস্টান্ট। ইসলামেও তাই। শিয়া ও সুন্নি। হিন্দুদের মধ্যে সেই বিভাজনরেখাটা যদিও বা কিছু থেকে থাকে, রেষারেষি, মারামারি, কাটাকাটি নেই অন্তত।
হিন্দুত্বের ছাতাটাও সম্প্রতি ক্রমশই বড় হচ্ছে, এবং সেটা খুবই দৃষ্টিকটূ ভাবে হচ্ছে বলে মনে করেন প্রীতীশ। বিভিন্ন তফশিলি জাতিকেও হিন্দু বলে চালানো হচ্ছে। তাঁর দাবি, শিখ, বৌদ্ধ, জৈনদেরও আনা হচ্ছে হিন্দু ছাতার তলায়! এখনও ছাতার বাইরে থাকা তফশিলি জাতিগুলিকে সেই ছাতার তলায় আনারও চেষ্টা চলছে। অথচ, তফশিলি জাতির মানুষকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের হাতে নিগৃহীত, অত্যাচারিত হতে হচ্ছে।
প্রীতীশের সাফ কথা, ‘ভারতে হিন্দুত্ব বলে এখন যেটাকে চালানো হচ্ছে, তার সঙ্গে হিন্দুইজম বা হিন্দু ধর্মের কোনও মিল তো দূরের কথা, যোগাযোগও নেই বিন্দুমাত্র। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের হিন্দুত্ব আসলে ওয়েপনাইজড ভার্সান অফ হিন্দুইজম। আর সেটাকে কার্যকর করতে গিয়ে রাজনীতির দেদার দুর্বৃত্তায়ন (‘লুম্পেনাইজেশন’) হচ্ছে। আর তাকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে (‘লেজিটিমাইজড’)। এটা হাস্যকর। এখন হিন্দু ও মুসলিমের মধ্যে কাটাকাটি, খুনোখুনির যত ঘটনা ঘটে চলেছে, দেশভাগের ঠিক পরেও সেই ভয়াবহতা ছিল না।’
প্রীতীশ মনে করেন, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করতে নামলে পিছনে সমর্থনের একটা সুন্দর ইজিচেয়ার থাকে। যেটা মট করে ভেঙে যায় না। তবে এর অত্যন্ত বিপজ্জনক দিকটা হল, এতে দেশের অভ্যন্তরীণ ক্রেতাবাজারটা খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যায়। তার ফলে, বিনিয়োগে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। তাঁর মতে, ‘সেটা হতে শুরুও করেছে। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়া তো দূরের কথা, বরং কমছে।’