এভাবে শেষ মুহূর্তে স্বপ্ন ভঙ্গ হবে কেই বা জানত! গতকাল অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে ভারতের জন্যে এরকম নেতিবাচক সমাপ্তি অপেক্ষা করছে তা বোধহয় ভাবার বাইরে ছিল। একবার জল পদ্মার দিকে, তো এক বার গঙ্গার দিকে। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের ইতিহাসে এমন উত্থান-পতনের ফাইনাল সাম্প্রতিক কালে হয়নি। ম্যাচ যখন রুদ্ধশ্বাস ক্লাইম্যাক্সের দিকে যাচ্ছে, তখন আবার বৃষ্টি। সেই বৃষ্টিই ধুয়ে দিল ভারতের পাঁচ বার যুব বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন। ডিএসএলে জয়ী বাংলাদেশ।
বৃষ্টির পর যখন বাংলাদেশ নামল, তখন জেতার জন্য প্রয়োজন ৬ রান। সব মিলিয়ে টার্গেট ৪৬ ওভারে ১৭০ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে ১৭০-৭ স্কোরই হয়ে দাঁড়াল বাংলাদেশের ইতিহাসের স্কোর। ৩ উইকেটে ভারতকে হারিয়ে প্রথম বার ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয় এগারো বাঙালির।
রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালোই করেছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার ইমন ও তানজিদ হাসান। খুব সহজেই তাঁরা সামলাচ্ছিলেন ভারতীয় বোলারদের। বাংলাদেশের দুই ওপেনার স্কোর বোর্ডে ৫০ রান তোলার পরে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তানজিদ (১৭)। ভারতকে ম্যাচে ফেরান লেগ স্পিনার রবি বিশনোই। তাঁর বলে তুলে মারতে গিয়ে তানজিদ আউট হতেই ধস নামে বাংলাদেশের ইনিংসে। কিছুক্ষণের মধ্যে প্যাভিলিয়নে ফেরেন মাহমুদুল হাসান জয়ও। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমি-ফাইনালে তাঁর সেঞ্চুরিতে ভর করে ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। এদিন বিশনোইয়ের গুগলিতে মাহদুল বোল্ড হয়ে গেলেন মাত্র ৮ রানে। এক ওভার বাদেই তৌহিদ হৃদয়কেও এলবিডব্লু করলেন সেই বিশনোই। এরপর শাহদাত হোসেনকেও (১) ফেরালেন তিনি। তাঁর বিষাক্ত স্পিন সামলাতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।
তবে ভারতের সেরা দুই পেসার কার্তিক ত্যাগী ও আকাশ সিং এদিন চরম হতাশ করেন। ১৯টি ওয়াইড করেছেন তাঁরা। সবমিলিয়ে ৩৩ রান অতিরিক্ত হিসেবে দিয়েছে ভারত। অবশ্য ভালো বোলিং করেছেন সুশান্ত মিশ্র। তাঁর বলে যশস্বীর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শামিম হোসেন (৭)। এরপর সুশান্তর বলেই অভিষেক দাস (৫) মারতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন কার্তিক ত্যাগীর হাতে। মারাত্মক চাপে থাকা বাংলাদেশকে বাঁচানোর জন্য ফের মাঠে ফেরেন হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়ে বেরিয়ে যাওয়া ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। চোট নিয়েও দারুণ লড়লেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৪৭ রানের মাথায় যশস্বীর বলে আকাশের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ইমন। তবে চাপের মুখে টেল এন্ডারদের নিয়ে দলকে স্বপ্নের তীরে পৌঁছে দেন অধিনায়ক আকবর আলি। ৭৭ বলে ৪৩ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। ১৪৩ রানে ৭ উইকেট ফেলে দিয়েও তাঁর দুরন্ত প্রতিরোধের মুখে শেষরক্ষা করতে পারেনি ভারতের ছোটরা। বৃষ্টি ও মন্দ আলোর কারণে খেলা কিছুক্ষণ বন্ধ থাকায় ডার্কওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে নতুন টার্গেট দাঁড়ায় ৪৬ ওভারে ১৭০। তবে বাংলাদেশের সেই রান ৪২.১ ওভারে ৭ হারিয়ে তুলে ফেলে। ডিএল মেথডে ৩ উইকেটে জয় পায় জুনিয়র টাইগার ব্রিগেড। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে রবি বিশনোই ৪টি ও সুশান্ত মিশ্র ২টি উইকেট পেয়েছেন।
ভারতের চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে বিপর্যয়ের মুখে একাই লড়লেন যশস্বী। যুব বিশ্বকাপে তাঁর দারুণ ফর্ম অব্যাহত থাকল ফাইনালেও। টুর্নামেন্টে পাঁচটি হাফ সেঞ্চুরি করে নজিরও গড়েন যশস্বী। এ বারের যুব বিশ্বকাপে যশস্বী সর্বোচ্চ রানের মালিকও। মোট ৪০০ রান করেন তিনি। ফাইনালে তাঁর সতীর্থরা যখন নিজেদের প্রয়োগ করতে ব্যর্থ, তখন ভারতের বাঁ হাতি ওপেনার একদিক ধরে রেখেছিলেন। কিন্তু ৮৮ রান করে তিনি ফিরে যাওয়ার পরেই ভারতের ইনিংস দ্রুত গুটিয়ে যায়। যশস্বীর ১২১ বলের ইনিংসে ছিল আটটি চার ও একটি ছক্কা। তাঁকে কিছুটা সঙ্গ দিয়েছিলেন তিলক ভার্মা। কিন্তু ৩৮ রান করে আউট হয়ে যান তিনি। শেষদিকে ধ্রুব জুরেল (২২) কিছুটা চেষ্টা করলেও দলকে টেনে তোলার জন্য তা যথেষ্ট ছিল না। ১৫৬ রানে চতুর্থ উইকেট পড়েছিল ভারতের। সেখানে থেকে ১৭৭ রানে দাঁড়ি পড়ল ইনিংসে। শেষ সাত উইকেট পড়ল মাত্র ২১ রানে