বিপ্লব দেবের আমলে বিজেপি দলেই কোনও গণতন্ত্র নেই। সরকারেও চলছে একনায়কতন্ত্র। ত্রিপুরার বিজেপি নেতারাই দিল্লিতে প্রতিনিয়ত এমনই নালিশ জানিয়ে চলেছেন। আগরতলার স্থানীয় দৈনিকের খবর, দলের বেশিরভাগ বিধায়কই ক্ষুব্ধ বিপ্লবের ওপর। ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষও। রাজ্যের উন্নয়ন প্রায় বন্ধ। চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন বেকার যুবকরা। সরকারি নিয়োগ বন্ধ। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে যেসব চাকরি মিলত সেগুলিও এখন আউটসোর্সিং হচ্ছে। চরম রক্তসঙ্কটে ভুগছে রাজ্যের বেশিরভাগ ব্লাড ব্যাঙ্ক। আর এই সব কারণেই ত্রিপুরায় বিজেপির জনপ্রিয়তা দিনদিন কমছে।
বিজেপির বিক্ষুব্ধরা বলছেন, ত্রিপুরার ‘বৈপ্লবিক শাসন’-এর মূল্য বাংলাতেও দিতে হবে দলকে। তাঁরা সরাসরিই দুষছেন বিপ্লবের ‘অযোগ্য’ নেতৃত্বকে। বিজেপির বহু নেতা-মন্ত্রী মনে করেন, মুখ্যমন্ত্রীর কারণেই সিপিএম বা কংগ্রেস দিনদিন শক্তিশালী হয়ে উঠছে। ত্রিপুরার ‘আদি’ ও ‘নব্য’ বিজেপি নেতাদের অনেকেরই বিশ্বাস, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও রাজ্য বিধানসভার উপ-বিরোধী দলনেতা বাদল চৌধুরির গ্রেফতারের মাধ্যমে বিপ্লব দলকে আরও বিপাকে ফেলেছেন।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ বামশাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১৮ সালে ত্রিপুরায় প্রতিষ্ঠিত হয় বিজেপি ও আইপিএফটির জোট সরকার। তবে বিজেপির বিধায়কদের বেশিরভাগ আগে অন্য দল করতেন। সিপিএমকে হারাতেই তাঁরা নাম লেখান বিজেপিতে। মুখ্যমন্ত্রী হন বিপ্লব। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর ‘বৈপ্লবিক’ সব মন্তব্যের পাশাপাশি চলতে থাকে বিরোধীদের ওপর আক্রমণ। আক্রমণের শিকার শরিক দলও। আইপিএফটির তরফে বহুবার এ নিয়ে প্রকাশ্যে অভিযোগ করা হয়েছে। আর বাদল চৌধুরির গ্রেফতার এবং অসুস্থতা সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গে ‘অমানবিক’ আচরণে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ।
ব্যাপারটা নিয়ে প্রশাসনেরও ‘ল্যাজেগোবরে’ অবস্থা। দুর্নীতির অভিযোগে তাঁকে ২১ অক্টোবর গ্রেফতার করলেও এখনও চার্জশিটই দাখিল করতে পারেনি পুলিশ। বর্তমানে জামিনে মুক্ত বাদলবাবু। প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগ তুলে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে সিপিএম। এক্ষেত্রে বাদলবাবুর স্বচ্ছ ইমেজ তাঁদের সাহায্য করছে। শনিবার সিপিএমের উপজাতি সংগঠনের কর্মসূচীতে ছিল নজরকাড়া ভিড়। কংগ্রেসের কর্মসূচীতেও ইদানীং ভাল লোক হচ্ছে। ত্রিপুরার সাধারণ মানুষ বিপ্লব দেবের প্রতি দ্রুত আস্থা হারাচ্ছেন। এমনটাই মনে করছেন বিরোধীরা।
বিজেপির নেতা-কর্মীদের মধ্যেও হতাশা চোখে পড়ছে। নতুন প্রদেশ সভাপতি ডাঃ মানিক সাহাকে নিয়ে কোনও উৎসাহ চোখে পড়ছে না। বরং দলের একঝাঁক নেতা তাঁর বিরুদ্ধে। বিজেপি বিধায়করাই অনেকে বলছেন, ‘বিপ্লবই তো জাগিয়ে তুলেছেন সিপিএমকে। তাঁর উল্টোপাল্টা কথার জন্য বাংলাতেও ভুগতে হবে দলকে।’ দলের বিক্ষুব্ধদের বিরুদ্ধেও প্রতিহিংসার রাজনীতি করারও অভিযোগ উঠেছে বিপ্লবের বিরুদ্ধে।