বাংলার ব্যাটসম্যানরা বিপক্ষকে ভয় পাচ্ছেন না। প্রত্যেকে লড়ছেন। শুক্রবার জয়পুরের সোয়াই মানসিংহ স্টেডিয়ামে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দু’উইকেটে জিতল বাংলা। নায়ক সেই শাহবাজ আহমেদ।
বাংলার হয়ে খেলা তো দূর, বাংলায় থাকার ব্যাপারেই একটা সময় প্রশ্নচিহ্ন পড়ে গিয়েছিল। সিএবির আধার কার্ড বিতর্কে বিদ্ধ হতে হয়েছিল তাঁকে। ঘরোয়া ক্লাব ক্রিকেটে এক ম্যাচ সাসপেন্ডও থাকতে হয়। পরিচয় পত্র যথার্থ কি না, প্রমাণ করতে হয়েছিল পুলিশের কাছে। তখন মনে হয়েছিল, কলকাতায় আসার স্বপ্ন ফেলে আবার ফিরে যেতে হবে নিজের রাজ্য হরিয়ানায়। সেই সব অন্ধকার অধ্যায় কাটিয়ে এখন বাংলার ক্রিকেটের ত্রাতা তিনিই মানে শাহবাজ আহমেদ।
বছর ২৫-এর স্পিনার-অলরাউন্ডারের দাপটে জয় ২ উইকেটে। উইনিং রান এল ভয়ডরহীন শাহবাজের (৬১ নট আউট) ব্যাটে। ফলে বাংলা টিকে গেল কোয়াটার্র ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে। শুক্রবার জয়পুরে বাংলাকে জেতানোর কারিগর শাহবাজই। রাজস্থানের বিরুদ্ধে এই ম্যাচ হারলে এ বারের মতো রঞ্জি অভিযান শেষ হয়ে যেত অরুণ লালের টিমের। সেখান থেকে সরাসরি জিতে ৬ পয়েন্ট পেয়ে এখন এলিট পুলে চার নম্বরে। বাংলার পয়েন্ট এখন ২৬।
এই ৬ পয়েন্ট পেতে কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে বাংলাকে। কী ভাবে একজন সাধারণ ক্রিকেটার থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠা যায়, এই ম্যাচ তারই উদাহরণ। বাংলার রান যখন ২০৮, ড্রেসিংরুমে ফিরে যান অনুষ্টুপ মজুমদার (৩৫)। অপরাজিত শাহবাজের সামনে তখন ১১২ রানের লক্ষ্য। সঙ্গে ক্রিজে অর্ণব নন্দী। কিন্তু ২৯ রানের মধ্যেই ভেঙে গেল জুটি। ২০ রান করে অর্ণব ফিরে যেতেই বাংলার ড্রেসিংরুমে ফিরল আতঙ্ক। কারণ প্রথম ইনিংসে ১২৩ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল তারা। টেলএন্ডারেরা মিলিয়ে ১ রান যোগ করেছিলেন সেই ইনিংসে। দ্বিতীয় ইনিংসে তার পুনরাবৃত্তি ঘটলে ছয় পয়েন্ট স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যেত!
শাহবাজ হাল ছাড়েননি। ক্যালকুলাস-ভক্ত এই ক্রিকেটার তখন জয়ের অঙ্ক কষতে শুরু করেছেন। আকাশের সঙ্গে ৫০ রানের জুটি গড়ে ড্রেসিংরুমে জয়ের আশা জাগিয়ে তোলেন শাহবাজ। কিন্তু ৫৩ বলে ২২ রানের ইনিংস খেলে ফিরে যান আকাশ। শেষ ৩৩ রান যখন বাকি, বাংলার ড্রেসিংরুম তখন নিস্তব্ধ। কোচ বলছিলেন, ‘‘কেউ নিজেদের জায়গা ছেড়ে এক ইঞ্চি নড়েনি।’’ শাহবাজ সেই মুহূর্তে কী ভাবছিলেন? বাংলার নতুন নায়ক বললেন, ‘‘শুধু মাথায় ছিল, জিততে হবে। নিজেকে বার বার বলেছি মেজাজ হারিয়ো না। এখান থেকে হারলে কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার রাস্তাই থাকবে না।’’
শেষ দশ রান যখন বাকি, শাহবাজ ভেবেছিলেন দু’টি ছয় মেরে ম্যাচ বার করে দেবেন। কিন্তু তিনি ফিরে গেলে নামতে হত নীলকণ্ঠ দাসকে। যখন জিততে দরকার আরও ছয়। শাহবাজ নিজেকে সামলাতে পারেননি। সেই ছয় মেরেই জয় নিশ্চিত করে দিলেন।