লোকসভায় কেন্দ্রীয় বাজেটের সমালোচনা করতে গিয়ে মোদী সরকারকে চরমভাবে তুলোধনা করে আবারও সংসদ মাতালেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদী সরকারের বাজেটকে ‘বেচো ইন্ডিয়া’ তকমা দিয়ে তাঁর জ্বালাময়ী বক্তৃতায় কুপোকাত করলেন বিজেপিকে। এই বাজেট আলোচনায় বাজেটকে ‘অর্থনীতির ট্রিপল মার্ডার’ আখ্যা দিয়ে থেমে থাকলেন না, শাসক দলকে কটাক্ষ করে বললেন, ‘সবকা ভুল কমল কা ফুল।’ লোকসভায় বলতে উঠেই নিজের পকেট থেকে দুটো ৫০০ টাকার নোট বের করলেন তৃণমূল সাংসদ। তারপর কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণকে নোট দুটি দেখিয়ে বললেন, ‘বাংলার অনেক প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হয়েছে মাত্র এইটুকুই!’
বিজেপি একদিকে দেশভক্তির কথা বলছে, অন্যদিকে বাজেটে এলআইসির মতো সংস্থা বিক্রি করে দিচ্ছে! এ প্রসঙ্গে অভিষেকের তীক্ষ্ণ খোঁচা, ‘আপনারা দেশকে মা বলেন, তাহলে মা-এর নিলাম না করে তাকে রক্ষা করা উচিত। সবই যখন বিক্রি করে দিচ্ছেন, তখন রাজভবন নিয়েও ভাবুন। রাজভবনের কাজ কী?’ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি বিক্রি করার প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন বারবার। ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ তুলে বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষ অনেক কষ্ট করে ব্যাঙ্কে টাকা রাখে। কিন্তু, সেখানে কষ্টার্জিত অর্থ সুরক্ষিত নয়। মানুষ বিভ্রান্ত। ঘরে টাকা রাখলে চোর নিয়ে যাবে। ব্যাঙ্কে টাকা রাখলে নকল চৌকিদার।’
অর্থনীতি প্রসঙ্গে অভিষেকের অভিযোগ, ‘বাজেটে তলানিতে ঠেকে যাওয়া অর্থনীতির অগ্রগতির হার টেনে তুলে আনার কোনও পরিকল্পনা নেই। দিশা নেই। এবারের বাজেট আসলে দেশের অর্থনীতির ট্রিপল মার্ডার।’ দেশের অর্থনীতির বেহাল দশার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে অভিষেকের অভিযোগ, ‘অর্থনীতি এতদিন অপারেশন থিয়েটারে ছিল। এবারের বাজেটে অর্থনীতিকে সেখান থেকে আইসিইউতে পাঠিয়ে দিলেন অর্থমন্ত্রী।’ এছাড়া মোদী সরকারের ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্পের বড়াইকেও কটাক্ষ করেছেন তিনি। বাংলার কন্যাশ্রী প্রকল্পের সঙ্গে তুলনা টেনে বলেছেন, ‘বরাদ্দ কই? ৭ হাজার কোটি টাকা শুধুমাত্র কন্যাশ্রী প্রকল্পে বরাদ্দ করেছি।’
প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের বুলেট ট্রেন নিয়েও আক্রমণ শানিয়েছেন অভিষেক। বলেছেন, ‘দেশকে বুলেট ট্রেন না দিয়ে সীমান্তে কর্তব্যরত জওয়ানদের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট দিন প্রধানমন্ত্রী।’ বিজেপি ও তাদের মন্ত্রীরা এবার নির্মলা সীতারমণের বাজেটকে ‘ঐতিহাসিক’ তকমা দিয়েছেন। অভিষেকের কটাক্ষ, ‘ঐতিহাসিক তো বটেই, ১৬০ মিনিটের ফাঁকা ভাষণ যে!’ লোকসভায় বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রায় ৪৫ মিনিটের ভাষণে আগাগোড়া বাজেটের নানা ঘাটতি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরেছেন তৃণমূল সাংসদ। তাঁর সআফ কথা, ‘কর্মসংস্থান, আর্থিক অগ্রগতি নিয়ে কোনও দিশা দেখাতে পারেননি অর্থমন্ত্রী। এই সরকারের একমাত্র প্রকল্প দেশ বিক্রি করে দেওয়া।’