ক্ষমতায় এসেই রাজ্যের শিল্পক্ষেত্রের হাল-হকিকত বদলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় বিনিয়োগ বাড়ানোকে পাখির চোখ করে বারবারই গিয়েছেন বিদেশ সফরে। সর্বত্রই শিল্পপতিদের উদ্দেশ্যে তাঁর আহ্বান ছিল, রাজ্যে বিনিয়োগের সহায়ক পরিবেশ রয়েছে। আপনারা বাংলায় লগ্নী করুন। এই নিয়ে বারবার বিরোধীদের কটাক্ষের মুখে পড়তে হলেও তাদের মুখে ঝামা ঘষে বাংলায় লগ্নীর জোয়ার এনেছেন মমতা। তাঁর উন্নয়নের কর্মযজ্ঞের ফলেই শিল্পে খরা কাটছে বাংলায়। আরও ভালে করে বললে, বিদেশি বিনিয়োগের অন্যতম গন্তব্য হয়ে উঠেছে বাংলা। এবার এ কথা স্বীকার করল খোদ কেন্দ্রও।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালে মোট নয়টি অর্থবর্ষে এ রাজ্যে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার ২৬২ কোটি টাকার প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে। কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রকের সূত্রই জানাচ্ছে, ২০১১-১২ অর্থবর্ষ থেকে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে এই বিরাট অঙ্কের বিদেশি পুঁজি এসেছে।
সূত্রের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৪ সালে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ নীতিতে বড়সড় পরিবর্তন আনে। যার জেরে দেশের একাধিক ক্ষেত্রে বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগের রাস্তা আরও সহজ হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, আগে বিমা ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগের সীমা থাকলেও নয়া সংশোধনীতে তা বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশ করা হয়েছে।
এই বিদেশি লগ্নীর প্রকৃত উদ্দেশ্য হল– বিশ্বায়নের যুগে দেশের সস্তা শ্রমিকের কাজের ও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের সুযোগ বৃদ্ধি এবং কয়েকশো কোটি মানুষের বাজার খুলে দেওয়া। মোদী সরকারের এই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে যোগ্য সঙ্গত করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। অন্তত বিদেশি লগ্নি টানার ক্ষেত্রে বাংলার এই ইতিবাচক অবস্থান বিশ্ব দরবারে ভারতকে শিল্প বান্ধব করে তুলতে ‘অনুঘটকের’ কাজ করছে।
এ প্রসঙ্গে রাজ্যের শিল্প দপ্তরের এক কর্তা বলেন, বামফ্রন্ট জমানার ‘ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’ নীতির জেরে বাংলায় দেশি শিল্পপতিরাই বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাতেন না। বিদেশি লগ্নী তো দূর অস্ত। কিন্তু পরিবর্তনের জমানায় শিল্প নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিকল্প ভাবনা এই মুহূর্তে বাংলাকে দেশের মধ্যে সেরা লগ্নী ক্ষেত্র হিসেবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। তার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ওই কর্তা বলেন, ক্ষমতায় এসেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্মঘট-লকআউট বন্ধ করে দিয়েছেন। যার জেরে রাজ্যে কর্ম দিবস নষ্ট হয় না বললেই চলে।
একই সঙ্গে নয়া শিল্প নীতি, জমি নীতি, শিল্প অনুমোদনের এক জানালা পদ্ধতি সহ একাধিক সিদ্ধান্ত বঙ্গে লগ্নি আনার ক্ষেত্রে চমকপ্রদ ভূমিকা নিয়েছে। তবে বিদেশি বিনিয়োগ টানার ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিষ্ক প্রসূত ‘বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন’ আয়োজন এবং একাধিক বিদেশ সফর বিশেষ সহায়কের কাজ করেছে।
ওই কর্তার দাবি, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট পাঁচটি ‘বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন’ আয়োজিত হয়েছে। যা থেকে মোট ১০ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে। দেশি-বিদেশি মিলিয়ে মোট ৫ লক্ষ কোটি টাকার বেশি লগ্নির কাজ প্রায় শেষের পথে। প্রস্তাবিত এই বিনিয়োগকে মূলধন করে আগামী দিনে রাজ্যে প্রায় আট লক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতে চলেছে। বিদেশি বিনিয়োগ টানার ক্ষেত্রে রাজ্যের স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিমণ্ডল এবং প্রশাসনিক প্রধান তথা মুখ্যমন্ত্রীর আন্তরিকতা বাড়তি মাইলেজ দিয়েছে বলেও মনে করেন ওই কর্তা।