ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ও নেইমার। আজকের বিশ্ব ফুটবলের উজ্জ্বল দুই তারকা একজন খেলেন স্প্যানিশ লিগে, আর অন্যজন ফরাসি লিগে। আজ ৫ ফেব্রুয়ারি, ফুটবল বিশ্বের এই দুই তারকার জন্মদিন। রোনাল্ডো আজ পা দিলেন ৩৫-এ। অপরদিকে নেইমার ২৮-এ।
রোনাল্ডার জন্ম ১৯৮৫ সালে পর্তুগালের মাদেইরা শহরে। মা-বাবা নাম রেখেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ডো রিগানের সঙ্গে মিল রেখে। ছোটবেলায় রোনাল্ডো ছিলেন অত্যন্ত গোবেচারা, নিরীহ প্রকৃতির। মজার বিষয় হচ্ছে সমবয়সী বন্ধুদের সঙ্গে নয়, রোনালদো খেলতে পছন্দ করতেন বড়দের সঙ্গে। বড়দের সঙ্গে খেলার সময় অনেক বেশ আঘাত পেতে হয়েছে। তবুও হাল ছাড়েননি। ছোটবেলা থেকেই অনুভব করতেন ফুটবলার হবেন। ফুটবলার হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়েই মাত্র ১২ বছর বয়সে খেলা শুরু করেন স্পোর্টিং দ্য লিসবোয়াতে। একপর্যায়ে মাদেইরা থেকে পরিবার-পরিজন ছেড়ে চলে আসেন। এরপর কেবলই এগিয়ে চলার গল্প।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পঁয়ত্রিশ বছরের জীবনকোষ্ঠীতে চোখ বুলোলে সময় সময় মনে হবে, এ মানুষটার কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী থাকতে পারে না। প্রতিদ্বন্দ্বীকে তো আগে জন্ম নিতে হবে! পুরোটাই তো ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো বনাম ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। দুই বিপরীতধর্মী সত্বার অবিরাম ঠোকাঠুকি। লিওনেল মেসি নামের সাত্বিক ফুটবল পুরোহিতের সেখানে কোনও জায়গাই নেই! বর্ণময় প্রেমময় জীবন একটা দিক। লিওনেল মেসি আজ পর্যন্ত হাতির শুঁড় আঁকা অন্তর্বাস পরে প্রেমিকার সামনে হাজির হয়েছেন বলে খবর নেই! প্যারিস হিলটন থেকে ইরিনা শায়েক, জর্জিনা রডরিগেজ থেকে কিম কারদাশিয়ান- নামীদামি সুপার মডেলদের সঙ্গে নিভৃতে নিশিযাপন করেছেন বলেও কেউ জানে না। মেসির প্রেম মেরেকেটে দেড়খানা। পুরনো এক বান্ধবী, তারপর সোজা আন্তোনেল্লা। আর আন্তোনেল্লাও প্রেমে গদগদ হয়ে ‘উফ, কী শরীর, কী দেখতে, প্রথম দেখাতেই শেষ হয়ে গেছিলাম’ মার্কা কথাবার্তা ইহজীবনে বলেননি। যেটা জর্জিনা, ক্রিশ্চিয়ানোর বর্তমান প্রেমিকা দিনকয়েক আগে বলেছেন পর্তুগিজ বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো কেমন, আজ বলতে পারত নুহুজেট গুইলেন। যে এখন পরম নিশ্চিন্তের ঘুমে, বেঁচে থাকলে আজ যে কুড়ি বছরের যুবক হত। নুহুজেট বলতে পারত, কীভাবে তার জন্য চার-চারটে বছর লড়ে গিয়েছিলেন কোনও এক সিআর। রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও । শুধু আত্মিক সম্পর্কের রক্তবীজ থেকে। দুরারোগ্য কর্কটরোগ ছিল খুদে রিয়াল মাদ্রিদ ভক্তের। বাঁচত না নুহুজেট। বাঁচেওনি। কিন্তু বেঁচে থাকলে আজ সে সব বলতে পারত।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো কেমন, আজও অনায়াসে বলে দেবেন নেরেদিয়া গালার্দো। বহু বছর আগের কথা, তবু মনে থাকা উচিত। সিআর রিয়াল মাদ্রিদ যাওয়ার আগে স্প্যানিশ মডেলের সঙ্গে একটু ‘আলাপ-পরিচয়’ হয়েছিল আর কী, তারপর খানিক ‘সুখদুঃখের’ গল্প! তা, একটু উষ্ণতার জন্য দু’জন যখন আসতেন কাছাকাছি, রোনাল্ডো নাকি সব সময় টকটকে লাল অন্তর্বাস পরে উদয় হতেন। তাতে আবার হাতির শুঁড় আঁকা!
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো কেমন, বলে দেবে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার নিপীড়িত মানুষগুলোও। যাদের জন্য নিজের ব্যালন ডি’ওর পুরস্কার নিলামে তুলে দিয়েছিলেন সিআর সেভেন! ঠিক পড়লেন, এটা সেই ব্যালন ডি’ওর ট্রফি যা ফুটবলারের শ্রেষ্ঠত্বের রাজমুকুট। এটা সেই ব্যালন ডি’ওর, যা লিওনেল মেসি পাবেন শুনে ফ্রান্সে এবার যাননি রোনাল্ডো। অথচ সেই একই পুরস্কার, ২০১৩-এ পাওয়া সেই বিশ্বশাসনের স্বীকৃতি কিনা হেলায় বিক্রি করে দিয়েছেন পর্তুগিজ ফুটবলদস্যু! বিশ্বাস না হলে, গাজায় যান। যুদ্ধবিধ্বস্তদের জিজ্ঞাসা করুন। ওরা আজও বলে দেবে। নিলাম থেকে ওঠা টাকাটা তো ওরাই পেয়েছিল!
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো কেমন, আজও জানেন ব্যালন ডি’ওর অনুষ্ঠানের জনৈক সঞ্চালক। সেবার ফ্রান্সে ছিল ব্যালন ডি’ওর, পেয়েছিলেন রোনাল্ডো। আর সঞ্চালক মহাশয় ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে, বিস্ময়ের বৃষ্টিতে ভিজে পুরস্কার প্রাপককে চিবিয়ে-চিবিয়ে বলতে শুনেছিলেন, “পুরস্কারটা দিলে, ভাল করেছ। কারণ আমিই এটা পাওয়ার যোগ্য। এই ফুটবল পৃথিবীতে আমিই এক, দুই, তিন! তারপর বাকিরা।” স্ফীত নাসা, গর্বিত গ্রীবা, আকাশছোঁয়া লাফ শেষে দু’পা ফাঁক করে দাঁড়ানো আপাত অহঙ্কারী মানুষটার আজ পঁয়ত্রিশ হল। দু’হাজার তিন এ যোগ দিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। সেখানে ছয় বছর কাটিয়ে দুইহাজার নয়-এ গায়ে চাপালেন রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি। একাধিক ব্যালন ডি অরের শিরোপা নিজের করে নিয়েছেন সময়ের সেরা এই তারকা।
এদিকে ব্রাজিলের কিংবদন্তীদের মধ্যে অন্যতম খেলোয়াড় নেইমার ডা সিলভা সান্তোস জুনিয়র। তার জন্ম ১৯৯২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। বছর আঠাশের এই যুবক তিনি সাধারণত নেইমার নামেই পরিচিত। একজন ব্রাজিলীয় পেশাদার ফুটবলার, যিনি ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন এবং ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে একজন ফরোয়ার্ড বা উইঙ্গার হিসেবে খেলেন। তাকে আধুনিক বিশ্বের উদীয়মান ফুটবলারদের মধ্যে অন্যতম মনে করা হয়। নেইমার ১৯ বছর বয়সে ২০১১ এবং ২০১২ সালে দক্ষিণ আমেরিকার বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হন। ২০১১ সালে নেইমার ফিফা ব্যালন ডি’অরের জন্য মনোনয়ন পান, তবে ১০ম স্থানে আসেন। তিনি ফিফা পুরস্কারও অর্জন করেন। তিনি সর্বাধিক পরিচিত তার ত্বরণ, গতি, বল কাটানো, সম্পূর্ণতা এবং উভয় পায়ের ক্ষমতার জন্য। তার খেলার ধরণ তাকে এনে দিয়েছে সমালোচকদের প্রশংসা, সাথে প্রচুর ভক্ত, মিডিয়া এবং সাবেক ব্রাজিলীয় ফুটবলার পেলের সঙ্গে তুলনা। অতুলনীয় এই দুই ফুটবলার মহারথীদের কেউ কারো তুলনায় আসার মতোই না ।