দু’হাতে দশদিক সামলাতে সিদ্ধহস্ত তিনি। একদিকে রাজনীতিও করেন। আবার পাশাপাশি চালিয়ে যান সাহিত্য চর্চাও। গল্প-উপন্যাস-কবিতা- সাহিত্যের সমস্ত ক্ষেত্রেই তাঁর অবাধ আনাগোনা। ফি বছরই বইমেলার প্রকাশ পায় তাঁর নতুন নতুন বই। তিনি আর কেউ নন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। এবার এনআরসির আতঙ্ক বই লিখে বোঝালেন তিনি। বইটির নাম দিয়েছেন ‘নাগরিকত্ব আতঙ্ক’।
উল্লেখ্য, ২৮ জানুয়ারি গান্ধীমূর্তির নিচে মমতা-সহ ৪০ জন শিল্পী এনআরসি-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ছবি এঁকেছিলেন। মমতার আঁকা ছবি ‘নাগরিকত্ব আতঙ্ক’ বইটির প্রচ্ছদে দেওয়া হয়েছে। শুরুতেই তিনি লিখেছেন, ‘আমরা সবাই নাগরিক।’ ভূমিকায় বলেছেন, ‘অতি সংক্ষেপে সিএএ, এনপিআর, এনআরসি নিয়ে কিছু ঘটনা ও কিছু মতামত এখানে লিপিবদ্ধ করেছি। মানুষের এই আন্দোলন এগিয়ে চলবে।’
বইয়ে লেখা হয়েছে, ‘আজ কেন নাগরিকদের প্রতি এত অবিশ্বাস? কেনই বা এত একদলীয় ভিন্নধর্মীয় সঙ্কীর্ণতার বিষ? যে বিষদাঁত ফুটিয়ে সারা দেশে জাগিয়েছে ভয়, ঘৃণা ও আতঙ্ক। কি করে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে পিষ্ট করে থামাতে হয় সেটা এখন বিজেপি–র একমাত্র লক্ষ্য। কত মানুষকে তাড়াতে পারলে ধর্মের নামে সঙ্কীর্ণ, ঘৃণ্য চক্রান্ত থামবে জানি না। মাথা উঁচু করে মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই হিসেবে এই লড়াইটা দেখতে ও লড়তে হবে।’
রেল, বিএসএনএল বিলগ্নীকরণ করা হচ্ছে। তৃণমূল নিজস্ব স্বাধীনতায় চলে। নিজস্ব রাজনীতির পন্থায় চলে। ক্যা শুধু হিন্দু–মুসলমানের ব্যাপার নয়। সারা পৃথিবীর মানুষ আজ জোট বাঁধছে। এনপিআর ও সেনসাস— এই দুটোর মধ্যে অনেক পার্থক্য। এনআরসি, ক্যা, এনপিআর ভারতের আদর্শের বিরোধী, সংবিধান বিরোধী পদক্ষেপ।
দেশ যখন প্রবল অর্থনৈতিক বিপর্য়ের মুখোমুখি, তখন শাসকদল এই ইস্যুগুলিকে নিয়ে কিভাবে মানুষের নজর ঘোরাচ্ছে, কিভাবে ধর্মের নামে বিভাজন ছড়াচ্ছে আমাদের ঐক্যের দেশে, তারই প্রতিবেদন এই বই। যদি সর্বনাশা শাসকের রাজনীতি থেকে দেশকে বাঁচাতে অনুপ্রাণিত হন, তাহলে আমার লেখা সার্থক।’
উল্লেখ্য, গতকাল বইমেলায় মিডিয়া সেন্টারে মমতার বইটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেন নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী। উপস্থিত ছিলেন দে’জ পাবলিশিংয়ের কর্ণধার সুধাংশুশেখর দে ও তাঁর ছেলে শুভঙ্কর (অপু) দে। বইটি প্রকাশ করে নৃসিংহবাবু বলেন, ‘এই বইটি উদ্বোধন করতে পেরে আমি গর্বিত।’