১১ ডিসেম্বরে শুরু হওয়া শাহিনবাগের আন্দোলন ৫০ দিন পার করেছে। ১৮ ডিসেম্বর থেকে সেই আন্দোলনের শরিক নাজিয়া। আন্দোলনে শরিক হতে গিয়ে হারিয়েছেন নিজের সন্তানকে। তবুও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হওয়া থেকে সরে যাননি।
একরত্তি মহম্মদ জহান গত দেড় মাস ধরে রোজ রাতে তার মায়ের সঙ্গে শাহিন বাগ যেত। চার মাসের মিষ্টি বাচ্চাটাকে কোলে নেওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যেত মহিলাদের মধ্যে। আন্দোলনকারীদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল সে। প্রায়শই দেখা যেত, ছোট্ট শিশুটির গালে তেরঙ্গা এঁকে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। সিএএ-এনআরসি-এনপিআর বিরোধী আন্দোলনে বিক্ষোভরত মায়ের থেকে অন্যদের কোলেই বেশি দেখা যেত তাকে। কিন্তু এই কনকনে শীতে সারা রাত বাড়ির বাইরে থেকেই সম্ভবত ঠান্ডা লেগে যায় চার মাসের শিশুটির।
সূত্রের খবর, ঠান্ডা লেগে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে মৃত্যু হয় ওই চার মাসের শিশুটির। মা নাজিয়া জানিয়েছেন, গত ৩০ জানুয়ারি রাত ১টা নাগাদ শাহিনবাগ থেকে বাড়ি ফিরে সন্তানদের ঘুম পাড়িয়ে নিজেও ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন সকালে উঠে দেখেন জাহান আর নড়ছে না। পরিবার সূত্রে খবর, দিল্লীর প্রবল ঠান্ডার মধ্যেই চার মাসের সন্তানকে নিয়ে প্রতিদিন আন্দোলনে যেতেন মহম্মদ আরিফ ও নাজিয়া। চিকিৎসকদের মতে, প্রতিদিন ঠান্ডায় খোলা আকাশের নীচে থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে জাহান।
কিন্তু এরকম আঘাত পেয়েও আন্দোলনের পথ থেকে সরছেন না সন্তানহারা মা। তিনি জানিয়েছেন, ভবিষ্যতের জন্য! অন্য ছেলেমেয়েগুলোর কথা ভেবেই তাঁকে ফের প্রতিবাদে শামিল হতে হবে।
নাজিয়া ও তাঁর স্বামী মহম্মদ আরিফ কয়েক বছর আগে উত্তরপ্রদেশের বরেলী থেকে দিল্লী এসেছেন। এখন থাকেন বাটলা হাউস এলাকার একটি বস্তির ছোট্ট ঘরে। অভাবের সংসারে মহম্মদ ছাড়া তাঁদের একটি পাঁচ বছরের মেয়ে ও একটি এক বছরের ছেলে রয়েছে। রিকশা চালান আরিফ। স্বামী-স্ত্রী দু’জনে মিলে সেলাইয়ের কাজও করেন।