আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ভারতের অর্থনীতিকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার বুলি আউড়িয়ে দেশবাসীকে যে স্বপ্নের ফানুসে চড়িয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, এক বছর পেরনোর আগেই যে তা ফুটো হয়ে গিয়েছে, সে কথা স্পষ্ট। কারণ প্রায় রোজদিনই তলানিতে নামার নতুন নতুন রেকর্ড করে চলেছে দেশের অর্থনীতি। এই আবহেই শনিবার সংসদে বাজেট পেশ করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। যদিও তাতে দেশবাসীর প্রত্যাশা তো পূরণ হয়ইনি, বরং বাজেট পেশের প্রায় ৫০ ঘণ্টা পরে প্রথম বার শিল্প মহলের মুখোমুখি হয়েই নির্মলাকে এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হল যে, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার দাওয়াই কোথায়? প্রশ্ন উঠল, আর্থিক বৃদ্ধি তলানিতে ঠেকেছে। অর্থনীতির ঝিমুনির প্রধান কারণ, বাজারে চাহিদা নেই। সেই চাহিদা বাড়াতে বাজেটে কী দাওয়াই দেওয়া হল? আমজনতার কেনাকাটা করার ক্ষমতা বাড়াতে কী করলেন?
অর্থমন্ত্রী জবাব দিলেন, প্রত্যাশা ছিল যে, অর্থনীতির ঝিমুনি কাটাতে সরকার দরাজ হাতে খরচ করবে। কিন্তু বাজার থেকে ধার করে, রাজকোষ ঘাটতি বাড়িয়ে তিনি সে পথে হাঁটতে চাননি। তাঁর কথায়, ‘আমরা খরচ করতে রাজি আছি, যদি তা করতে হয়। কিন্তু দেদার খরচ বাড়িয়ে অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি করব না। আমরা এখন শুধু পরিকাঠামো তৈরিতে খরচ করব।’ ২০০৮-এ বিশ্ব জুড়ে মন্দার মোকাবিলায় তৎকালীন ইউপিএ-সরকার রাজকোষ ঘাটতির রাশ আলগা করে, খরচ বাড়িয়ে অর্থনীতি চাঙ্গা করার দাওয়াই বা ‘স্টিমুলাস’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তাতে মন্দার আঁচ থেকে দেশের অর্থনীতিকে বাঁচানো গেলেও মূল্যবৃদ্ধির হার বেড়ে গিয়েছিল। রাজকোষ ঘাটতি ও চালু খাতায় বিদেশি মুদ্রার লেনদেনের ঘাটতি নাগালের বাইরে চলে গিয়েছিল। নির্মলা সে দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘সে সব আমাদের স্মৃতিতে এখনও টাটকা।’
কিন্তু প্রাথমিক ভাবে বাজারে চাহিদা বাড়বে কী করে, কেনাকাটার ক্ষমতা কোন পথে বাড়বে, ফিকি-র সদস্য মোহিত সরাফ সেই প্রশ্ন তুলেছেন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গ্রামে রোজগার কমেছে। সেখানকার বাজারে চাহিদা বাড়াতে টাকা জোগানোর দরকার ছিল। একই প্রশ্ন তুলে শিল্পপতি বিক্রমজিৎ সিংহ সাহনের প্রশ্ন, চাষিরা তো সমস্যায় রয়েছেন। তাঁরা বাজেটে কী পেলেন? অর্থমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন, তিনি বাজেট বক্তৃতায় চাষিদের জন্য ১৬ দফা পদক্ষেপের কথা বলেছেন। তাঁর বাজেট বক্তৃতা ইতিহাসে দীর্ঘতম ছিল। কিন্তু সমস্ত মহলের জন্য আলোচনা করেই তিনি বাজেট করেছেন। তাই বাজেটের প্রস্তুতিতেও তিনি দীর্ঘতম সময় নিয়েছেন। কিন্তু শেয়ার বাজার যে খুশি হল না? তাঁর সাফাই, ‘শেয়ার বাজার হয়তো উল্লসিত নয়। তবে খুশি।’