‘ফ্যাসিবাদী শক্তি আসামে বাঙালি নির্মূল অভিযান চালাচ্ছে’- আসামে বাঙালিদের ভোগান্তি দেখে বারবারই এই অভিযোগ উঠেছে সে রাজ্যের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে৷ ইতিমধ্যেই লাখ দুয়েক বাঙালি নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যস্ত। জেল খাটছেন ৯৮৮ জন। আবার ২৭ জন প্রাণও হারিয়েছেন ডিটেনশন ক্যাম্পে। সবমিলিয়ে আসামের বাঙালিরা চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে আসামের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন, আসামে বিজেপির আমলে এনআরসির শিকার হিন্দু বাঙালিরাই বেশি। গোর্খারাও রয়েছেন এই দলে। এটা মাথায় রেখেই বাংলার মানুষকে ভোট দিতে হবে।
রবিবার সল্টলেকের একটি বেসরকারি হোটেলে এনআরসি, এনপিআর ও ক্যা নিয়ে আলোচনা চক্রের আয়োজন করেছিল দলিত ও সংখ্যালঘু উন্নয়ন পরিষদ (এমএমডিসি)। এই আলোচনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি ছিলেন সমাজের বিভিন্নস্তরের মানুষেরা। সেখানেই গগৈ বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাংলায় পেরে উঠবে না বিজেপি।’ একই সঙ্গে তাঁর অভিমত, বিভেদের রাজনীতিতে সাময়িক সাফল্য এলেও স্থায়ী সাফল্য আনতে পারে অর্থনীতি। আর সেখানে বিজেপির গোটা দেশেই পারফরমেন্স খুব খারাপ। মানুষ বিজেপির কৌশল দেরিতে হলেও বুঝে নিয়েছে বলেও মনে করেন এই প্রবীণ কংগ্রেস নেতা।
তরুণ গগৈ ছাড়াও কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল, বিজেপি দলের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। ছিলেন প্রাক্তন পুলিশ কর্তা পঙ্কজ দত্ত, প্রাক্তন মন্ত্রী আব্দুস সাত্তার, সিপিএম নেতা ফুয়াদ হালিম প্রমুখ। এনআরসি-এনপিআর-সিএএ নিয়ে বিরোধী দলগুলি লাগাতার আক্রমণে অনেকটাই দিশেহারা লাগে বিজেপি প্রতিনিধিদের। তরুণ গগৈ বলেন, ‘বিজেপি অসমের মানুষদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। কোনও প্রতিশ্রুতিই পালন করেনি। শুধু অসম কেন, গোটা দেশেই তো বিজেপি–র কোনও কাজ নেই। শুধু জাতপাতের রাজনীতি।’
তিনি এমনও দাবি করেন যে, এনআরসি তাঁরই ‘ব্রেন চাইল্ড’। কিন্তু বিজেপি সেই শিশুকে মানুষ করার বদলে ‘অরফান’ বানিয়ে ছেড়েছে। ১৬০০ কোটি টাকা খরচ করে ভাষীক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের চরম হয়রানির পরও এনআরসি নিয়ে অমিত শাহদের পিছু হঠা নিয়ে কটাক্ষ করেন তিনি। তরুণ গগৈয়ের মতে, বিজেপি ভেবেছিল অসম থেকে মুসলিমরা বাদ যাবে। কিন্তু হিন্দুরাই বেশি বাদ যাওয়ায় এখন ‘মুখ লুকোচ্ছে’ বিজেপি। বাংলার মানুষকে তিনি পরামর্শ দেন, ‘বিজেপির আমলে আসামে হিন্দু কেন বেশি বাদ গেল? প্রশ্ন করুন বিজেপি নেতাদের।’
একই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, ‘কোথায় বিজেপি? এত কিছু করেও তো সেই কংগ্রেস বা অন্য দলের নেতারাই জিতে চলেছেন বিজেপির টিকিটে। খাঁটি বিজেপি তো নাই-ই। তারপরও কী হল মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ডে!’ নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই তাঁর দাবি, বাংলায় মমতাই জিতবেন। বিজেপি পারবে না। আসামের মানুষও বুঝতে পেরেছে বিজেপির ‘চিটিংবাজি’।