হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়াতে পারল না নিউজিল্যান্ড। রবিবার টি-২০ সিরিজের পঞ্চম তথা শেষ ম্যাচে জয়ের আশা জাগিয়েও ৭ রানে হারতে হল কিউয়িদের। চলতি সিরিজে এটা নতুন ঘটনা নয়। গত দু’টি ম্যাচেও একটা সময় পর্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও, শেষলগ্নে স্নায়ুর চাপ নিতে পারেনি কিউয়িরা। যার ফলে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবার ৫-০ ব্যবধানে টি-২০ সিরিজ জিতে সহজেই ইতিহাস গড়ে ফেললেন বিরাট কোহলিরা।
রবিবার মাউন্ট মাউঙ্গানুইয়ে বিরাটের পরিবর্তে রোহিত শর্মাকে টস করতে দেখে অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। রোহিতই জানিয়ে দেন, ৪-০ এগিয়ে থাকায় শেষ ম্যাচে বিশ্রাম নিয়েছেন অধিনায়ক। পরিবর্তে দায়িত্ব নিতে হয়েছে সহ-অধিনায়ককে। টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন রোহিত। কিন্তু তাঁকে ওপেন করতে না দেখে ফের বিস্মিত সমর্থকেরা। বিরাট বিশ্রামে। রোহিত তিনে নেমে সঞ্জু স্যামসনকে ওপেন করার সুযোগ করে দেন। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি সঞ্জু। রোহিতই বিপক্ষের সামনে ১৬৪ রানের লক্ষ্য দিতে সাহায্য করলেন ৪১ বলে ৬০ রান করে। কিন্তু বাঁ-পায়ের পেশির চোট তাঁকে ফিরিয়ে দিল ড্রেসিংরুমে। আহত ও অবসৃত হয়ে মাঠ ছাড়েন রোহিত। তাঁর জায়গায় নেতৃত্ব দেন কে এল রাহুল।
১৬৩ রানের জবাবে শুরু থেকেই নড়বড়ে দেখিয়েছে নিউজ়িল্যান্ডকে। হারানো ছন্দ যেন এই ম্যাচেই ফিরে পেয়েছিলেন যশপ্রীত বুমরা। চার ওভারে ১২ রানে তিন উইকেট নেন তিনি। একটি মেডেন ওভারও ছিল তাঁর স্পেলে। ম্যাচের সেরাও তাঁকেই বেছে নেওয়া হয়। মার্টিন গাপ্টিল (২), ডারিল মিচেল (২) ও টিম সাউদিকে ফেরালেন বুমরা। দু’টি করে উইকেট নবদীপ সাইনি ও শার্দূল ঠাকুরের।
১৬৪ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে নিউজিল্যান্ড একটা সময় ৩ উইকেট হারিয়ে ১২ ওভারে তুলে ফেলেছিল ১১৩ রান। জয়ের জন্য তাদের করতে হতো ৫১ রান। হাতে তখন ৪৮টি বল। টিম সেইফার্ট ৪৯ ও রস টেলর ৪৩ রানে ক্রিজে তখন জাঁকিয়ে বসেছেন। চতুর্থ উইকেটে তাঁদের দুরন্ত পার্টনারশিপ দেখে মনে হচ্ছিল, নিউজিল্যান্ড হয়তো সহজেই হোয়াইটওয়াশ এড়াতে পারবে। কিন্তু তার পরেই ম্যাচে নাটকীয় পট পরিবর্তন ঘটে। ত্রয়োদশ ওভারে নবদীপ সাইনির চতুর্থ ডেলিভারিতে বিশ্রী আউট হয়ে দলকে চাপে ফেলে দেন সেইফার্ট (৫০)। সেখান থেকেই পতন শুরু কিউয়িদের। পরের ওভারে বুমরাহর বিষাক্ত ইয়র্কারে বোল্ড হন মিশেল (২)। রানের গতিতে লাগাম টানার পাশাপাশি উইকেট তুলে নেন ভারতের এই দুই পেসার। রস টেলর উইকেটে থিতু হয়ে গিয়েছিলেন। তাই ভারতীয় বোলাররা টার্গেট করেছিলেন নবাগত ব্যাটসম্যানদের। ১৫তম ওভারে স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দর দেন মাত্র তিন রান। নিউজিল্যান্ডের আস্কিং রেট দ্রুত মাথা চাড়া দিতে শুরু করে। সপ্তদশ ওভারে শার্দুল ঠাকুর আরও দু’টি উইকেট তুলে নেওয়ায় প্রবল চাপে পড়ে যায় নিউজিল্যান্ড। ১৮তম ওভারে সাইনির প্রথম ডেলিভারিতে রস টেলর কট বিহাইন্ড হওয়ার পর ম্যাচ প্রায় হাতের বাইরে চলে যায় কিউয়িদের। উল্লেখ্য, চলতি সিরিজে রস টেলরের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান বার বার চাপের মুখে ভেঙে পড়েছেন। তাঁর ভুলের খেসারত গুনতে হয়েছে গোটা দলকে। এদিন টেলর ৪৬ বলে ৫৩ রান করলেও তা কোনও কাজে লাগেনি। পরের ওভারে ফের বুমরাহ ইয়র্কারকে হাতিয়ার করে বোল্ড করেন টিম সাউদিকে (৬)। পর পর উইকেট পতনে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় কিউয়িদের। অন্তিম ওভারে জয়ের জন্য নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ২১ রান। দ্বিতীয় ও চতুর্থ ডেলিভারিতে ইশ সোধি বিশাল ছক্কা মারার পর অশনিসংকেত দেখা দিয়েছিল ভারতীয় শিবিরে। শেষ পর্যন্ত সোধি এই ঝড় বজায় রাখতে পারলে ম্যাচ আরও রোমাঞ্চকর হয়ে উঠত। ভুল শুধরে শার্দুল অন্তিম দু’টি ডেলিভারিতে মাত্র এক রান দেন। হেসেখেলে জয়ের কড়ি জোগাড় করে নেয় ভারত।