মেলা মানেই মিলনক্ষেত্র। যেখানে মুখোমুখি দেখা হয়ে যায় বহু মানুষের। আর বইমেলা হল এমন একটি স্থান, যেখানে বইয়ের সঙ্গে সরাসরি দেখা হয়ে যায় পাঠকের। যেখানে সরাসরি মেলবন্ধ ঘটে লেখক, লেখা এবং পাঠকের। তাই বাংলার বইপোকাদের কাছে বারোমাসের চোদ্দতম পার্বণ হল কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা। একইসঙ্গে নতুন নতুন কবি-লেখকদের জন্মস্থানও বটে। এবারের কলকাতা বইমেলাতেও তার অন্যথা ঘটেনি। এবার ৪৪ তম বর্ষে পা দেওয়া কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় আত্মপ্রকাশ করেছেন একঝাঁক কবি-সাহিত্যিক। মুক্তির আলো দেখেছে তাঁদের প্রথম বই। যদিও প্রথম বই হলেও ধারেভারে কিন্তু তা মোটেও কাঁচা হাতের লেখনী নয়।
যেমন প্রথমেই বলা যায় কলকাতা নিবাসী কবি অগ্নিভ নিয়োগীর কথা। ২০০৮ থেকে নিজের ব্লগেই লেখালিখি শুরু তাঁর। কবিতা লেখার নেশায় ২০১১-য় ছেড়েছেন পিএইচডি-পড়ার সুযোগও। এবারের বইমেলায় অক্ষর সংলাপ প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পেয়েছে অগ্নিভর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘না বলা কথাগুলো’। যা পাওয়া যাচ্ছে বইমেলার বার্তা প্রকাশনীর স্টলে(১৯৮ নং)। বইমেলা প্রাঙ্গনে অগ্নিভর বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন প্রখ্যাত কবি রুদ্র গোস্বামী। ‘না বলা কথাগুলো’য় রয়েছে মোট ১২টি দীর্ঘ কবিতা। যেগুলি লেখা হয়েছে ২০১১ থেকে ২০২০- মূলত এই দশ বছরের সময়কালে।
অগ্নিভর কথায়, ‘২০০৮ থেকে লেখালিখির নেশা। নেশাকেই নিজের পেশা করব, এই সিদ্ধান্ত থেকেই ২০১১ সালে পিএইচডির পঠন-পাঠন ছেড়ে কনটেন্ট রাইটিং শুরু। তারপর সময় যত এগিয়েছে, ততই কলমের মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে না বলা কথাগুলো। যখনই প্রকাশ্যে কোনও কথা বলতে পারিনি, তখনই কথা বলেছে কলম।’ এই বইতে পাঠক কী পাবে, প্রেম নাকি বিরহ? অগ্নিভর উত্তর, ‘সেভাবে নির্দিষ্ট একটি বিষয় উঠে আসেনি আমার বইতে। এই না বলা কথাগুলোর কারণ কখনও প্রেম, কখনও বা কোনও অন্যায়ের প্রতিবাদ। আবার কখনও নিজের আত্মতৃপ্তির কথাও উঠে এসেছে লেখায়। যা হয়ত সকলের সামনে এর আগে প্রকাশ করা হয়নি।’
আবার অগ্নিভর মত জীবনের প্রথম বই না হলেও প্রকাশিত হয়েছে প্রবীণ সাংবাদিক অগ্নি রায়ের তৃতীয় বই। সেই ১৯৯০ সালে পবিত্র মুখোপাধ্যায়ের কবিপত্র লিটল ম্যাগাজিন প্রথম লেখা ছাপা হলেও এ বছরই সিগনেট প্রেস থেকে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর প্রথম বই ‘জর্দা বসন্ত’। যাতে রয়েছে ৪৫টি কবিতা। বইয়ের এ হেন নামকরণের ব্যাপারে কবি জানান, ‘বইয়ের একটি কবিতার শিরোনামেই বইয়ের নামকরণ করা হয়েছে জর্দা বসন্ত। বসন্ত কালের যে লালচে ভাব, মাতাল করা সুগন্ধ, তা অনেকটাই যেন পানের জর্দার মতই।’ মূলত শক্তি চট্টোপাধ্যায়, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, জয় গোস্বামীদের লেখা পড়েই তাঁর কবিতা লিখতে আসা বলে জানিয়েছেন অগ্নিবাবু।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সময়ে টিভি দেখার প্রচলন তেমন ছিল না৷ কাজ বলতে ছিল খেলাধুলো এবং বইপড়া। বই পড়তে গিয়েই আমার হাতে চলে আসে কিছু কবিতার বই। যা পড়ে আমার মনে হয়েছিল এমন তো আমি আমার পাঠ্যপুস্তকে পাইনি। আমি যা জানি, এ তো তার বাইরের কথা বলছে। সেই শুরু। তারপর শক্তি চট্টোপাধ্যায়, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এবং জয় গোস্বামীর প্রথম দিকের কাব্যগ্রন্থগুলি পড়েই লেখার অনুপ্রেরণা পাওয়া।’ অগ্নিবাবুর দাবি, একটানা লেখেন না তিনি। খুবই অল্প লেখেন, মন থেকে তাগিদ অনুভব করলেই। সেই লেখাগুলোই এবার শীতের আমেজ গায়ে মেখে একসাথে এল ‘জর্দা বসন্ত’ রূপে। যা পাওয়া যাবে বইমেলার সিগনেট প্রেসের স্টলেই।
অন্যদিকে, অগ্নিভ নিয়োগীর মতই এই বইমেলার নতুন কবিমুখ অপূর্ব দাস, অরুণাশিস সোম, মহুয়া সিংহ রায়রা। এঁদের সকলের বই-ই প্রকাশ পেয়েছে বার্তা প্রকাশনী থেকে। বয়সে সবচেয়ে তরুণ অপূর্বর ‘চারমিনার’, ক্যালিফোর্নিয়া নিবাসী অরুণাশিসের প্রথম বই ‘আমায় তুমি সামলে রেখো’ এবং সোদপুর নিবাসী মহুয়ার প্রথম বই ‘কিছুই না, তবুও’ – এই তিনটে কবিতার বই-ই থাকছে বার্তা প্রকাশনীর স্টলে। এভাবেই ‘বইমেলা ধুলো’ মেখে বাংলা সাহিত্যে উঠে আসছেন একঝাঁক নতুন কবি। এবং তাঁদের ডালপালা মেলার জায়গা করে দিচ্ছে ৪৪ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা।