‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ – ২০১৯ লোকসভা ভোটের আগে এই ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীদের স্লোগান। যেমন ২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগে ‘আচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন ফেরি করেছিলেন তিনি। তবে ‘আচ্ছে দিন’ তো আসেইনি। বরং দেখা যাচ্ছে সামান্য ‘বিকাশ’টুকুও হয়নি নতুন প্রজন্মের। হ্যাঁ, ২০১৫-১৬ থেকে পর্যায়ক্রমে দেখলে সাধারণ বাজেটে শিশুদের জন্য বরাদ্দ মোট বাজেটের মাত্র ৩ শতাংশ। ২০১৯-২০তে সেই অঙ্কটা ৩.২৯ শতাংশ। এই হিসেব থেকেই স্পষ্ট শিশুরা বাজেটে কোনও গুরুত্বই পাচ্ছে না। সে কথাই মনে করছেন শিশু অধিকার কর্মীরা।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের এক কর্তা বলছেন, ‘শিশুদের উন্নয়নে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সেটা করাও হয়। কেন্দ্র অনেক প্রকল্প তাদের জন্য আরম্ভ করেছে। পুরোটা টাকার অঙ্কে বিচার করা ঠিক নয়।’ কিন্তু তা মানতে নারাজ শিশু অধিকার কর্মীরা। তাঁদের প্রশ্ন, ‘যদি যথেষ্ট টাকা না থাকে, তা হলে কোথা থেকে প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত হবে?’ বাংলার শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী বলছেন, ‘মাত্র ৩ শতাংশ অর্থবরাদ্দ খুবই উদ্বেগজনক। একদিকে প্রচার করা হচ্ছে ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পঢ়াও’, অন্যদিকে তার জন্য অর্থ নেই। তাই এই বাজেটেও এই সরকারের কাছ থেকে আমার কোনও প্রত্যাশা নেই।’
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ক্রাই’-এর সিইও পূজা মারওয়াহ অবশ্য কিছুটা আশাবাদী। তাঁর কথায়, ‘সংবিধানের ৩৯(এফ) ধারায় রাজ্যগুলিকে বলা হয়েছে শিশুদের জন্য উন্নয়নের জন্য সামগ্রিক প্রকল্প আনতে। সে জন্য কেন্দ্রীয় সরকার শিশুদের জন্য ‘ন্যাশনাল প্ল্যান অফ অ্যাকশন ফর চিলড্রেন (২০১৬) আনে। সেখানে শিক্ষা-স্বাস্থ্য-পুষ্টি-উন্নয়ন ও নিরাপত্তার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। আশা করছি এ বারের বাজেটে (২০২০-২১) শিশুদের জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ করা হবে। সে জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা হবে।’
আবার ‘বিক্রমশীলা এডুকেশন রিসোর্স সোসাইটি’র ‘চাইল্ড প্রোটেকশন ও অ্যাডভোকেসি’র প্রধান সত্যগোপাল দের মতে, ‘শিশুদের জন্য দেশের প্রতিটি জেলায় শিশু-বান্ধব আদালত, সব থানায় বিশেষ জুভেনাইল ইউনিট, আইসিপিএসে বরাদ্দ বাড়ানো – এ সবের প্রয়োজন আছে। প্রয়োজন রয়েছে জুভেনাইল জাস্টিস সিস্টেমে কেন্দ্রীয় অংশীদারিত্ব বাড়ানো, জুভেনাইল জাস্টিস ফান্ড তৈরি ও শিশু পাচার আটকাতে টাস্ক ফোর্স তৈরি করা। এই টাস্ক ফোর্স শুধু বাংলা ও মহারাষ্ট্রে রয়েছে। তাই সব মিলিয়ে ৩ শতাংশ বাজেট একেবারেই নগণ্য।’
শিশু অধিকার কর্মীদের বক্তব্য, বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে এ বারের বাজেটে নজর দেওয়া উচিত। তার মধ্যে রয়েছে মাধ্যমিক শিক্ষা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা, শিশুদের পুষ্টি, বয়ঃসন্ধির মেয়েদের জন্য ব্যবস্থাগ্রহণ ও বাল্যবিবাহ রোধে পদক্ষেপ। কারণ, এই বিষয়গুলি শিশুদের সর্বাঙ্গীন বিকাশ ও উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত। যেমন মাধ্যমিক স্তরে লেখাপড়া শেষ করাটা শিশুদের ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ। সে ক্ষেত্রে অনেক সময়ই দেখা যায় প্রাথমিকের তুলনায় মাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা কম। নয়া শিক্ষা নীতিতে (২০১৯) প্রাক প্রাথমিক স্কুলের গুরুত্ব বাড়ানো হলেও, সেখানেও কোনও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়নি।
শিশু পুষ্টির ক্ষেত্রেও এক ছবি। ২০১৮ সালে ‘পোষন অভিযান’ শুরু করা হলেও, তা নামেই রয়ে গিয়েছে। নীতি আয়োগের একটি তথ্যই বলছে, এই প্রকল্প অত্যন্ত ঢিমেতালে চলছে। পাশাপাশি প্রয়োজন, বয়ঃসন্ধির মেয়েদের ক্ষেত্রেও বিশেষ গুরুত্ব। তাদের মধ্যেই স্কুলছুট থাকে সবচেয়ে বেশি। তার ফলে ওই বয়সি মেয়েরাই বাল্যবিবাহের শিকার হয়। এই দু’টি ক্ষেত্রেই দরকার ‘সিস্টেমেটিক অ্যাপ্রোচ’ যা এগুলো প্রতিরোধ করতে পারে। ‘কিশোর স্বাস্থ্য কার্যক্রম’ নামে একটি প্রকল্প থাকলেও তা অধিকাংশের কাছেই পৌঁছচ্ছে না। ফলে এরা থেকে যাচ্ছে সেই তিমিরেই।