কর্পোরেট কর যেমন ছাড় দেওয়া হয়েছে, তেমনি বহুক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে আম করদাতাদের ঘাড়ে বন্দুক রেখেই নিজেদের কার্যসিদ্ধি করে নিয়েছে মোদী সরকার। আর এবার দেখা গেল, আবারও ‘বলির পাঁঠা’ হচ্ছেন সেই করদাতারাই। হ্যাঁ, নির্বাচনী বন্ড কিনছেন কোটিপতিরা, টাকা যাচ্ছে রাজনৈতিক দলের তহবিলে আর ব্যাঙ্কের চার্জ মেটাচ্ছেন করদাতারা! একটি সর্বভারতীয় পোর্টালের হাতে আসা তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে উঠে এসেছে এমনই গোপন সত্য।
নির্বাচনী বন্ড কেনাবেচার জন্য যে ব্যাঙ্কিং ফি, কমিশন, ছাপার খরচ এবং আনুষাঙ্গিক খরচ লাগে, তার একটা পয়সাও বন্ডের ক্রেতা বা সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের পকেট থেকে যায় না। সে খরচ মেটানো হয় দেশের ‘কনসোলিডেটেড ফান্ড’ থেকে, যা আদতে করদাতাদের পকেট থেকে আসা করের টাকা। উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হল, সাধারণ নাগরিকরা যদি বন্ড কেনাবেচা করেন, তা হলে ব্যাঙ্কিং ফি থেকে শুরু করে কমিশন- সবই যায় তাঁদের পকেট থেকে, নির্বাচনী বন্ডের ক্ষেত্রেই শুধু ব্যতিক্রম!
গত মাসের প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, এতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয় বিজেপিই। ২০১৮-১৯ সালে বিজেপির মোট নির্বাচনী অনুদানের ৬০ শতাংশ (প্রায় ১,৪৫০ কোটি টাকা) এসেছে নির্বাচনী বন্ড থেকেই। যে কোনও ব্যক্তি নির্বাচনী অনুদান দিলে, তা তাঁর করমুক্ত আয় বলে গণ্য হয়, আর তাই কোটিপতিরা অনেক সময়ই তাঁদের টাকা পছন্দের রাজনৈতিক দলের কোষাগারে ঢেলে দেন। এর ফলে একদিকে কোষাগারে কর জমা পড়ে কম, অন্যদিকে, ব্যাঙ্কিং খরচে বেরিয়ে যায় কোষাগারের বিপুল অঙ্কের টাকা, অর্থাৎ দু’দিক থেকেই ক্ষতি সরকারি কোষাগারেরই।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে নির্বাচনী বন্ডের প্রক্রিয়া শুরুর পর প্রথম এর খরচ নিয়ে আপত্তি তুলেছিল কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক। সে সময় বলা হয়েছিল খরচ প্রোটোকলের সবকিছু প্রকাশ করবে সরকার, কিন্তু আদতে দেখা গেল পুরোটাই গোপনে রেখে নির্বাচনী বন্ড কেনাবেচা চালিয়ে যাচ্ছে দলগুলো। আর এই ব্যাঙ্কিং ফি-র খরচও নেহাত কম নয়। ২০১৮-এর মার্চ থেকে ২০১৯-এ মে-র মধ্যে ৫,৮৩২ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড কেনাবেচায় ব্যাঙ্কিং খরব হিসেবে এসবিআই অর্থ মন্ত্রককে ৩.২৪ কোটি টাকার বিল পাঠিয়েছে!
নির্বাচনী বন্ড খরচসাপেক্ষ হবে, এই যুক্তিতে প্রথমেই আপত্তি তুলেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সেই সময় অর্থ মন্ত্রক প্রস্তাব দিয়েছিল, ব্যাঙ্কের চার্জ এবং কমিশন আরবিআই মিটিয়ে দিক। আর ১৫ দিনের মধ্যে যে বন্ডগুলো এনক্যাশ করা হবে না, সেগুলোর টাকা ভারতের ‘কনসোলিডেটেড ফান্ডে’ চলে যাবে। কিন্তু কালক্রমে নির্বাচনী বন্ড কেনাবেচা এবং খরচ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিষয়টি গিয়ে পড়ে এসবিআইয়ের ঘাড়ে। আর ১৫ দিনে এনক্যাশ না হওয়া ইলেক্ট্ররাল বন্ডের টাকা সোজা চলে যায় প্রধানমন্ত্রী রিলিফ ফান্ডে। অর্থাৎ, কিছুই ঢোকে না কোষাগারে। বহাল থাকে সেই ভাঁড়ে মা ভবানী দশাই।