অবসর নেওয়ার পরে নাতি-নাতনিদের তাঁর খেলোয়াড় জীবনের গল্প বলার অভাব ছিল না রজার ফেডেরারের। সেই তালিকায় আরও একটা অবিশ্বাস্য ম্যাচের কথাও ঢুকে পড়ল মঙ্গলবার। সাত, সাতটা ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচিয়ে, পাঁচ সেট লড়াই করে ৩৮ বছর বয়সি সুইস কিংবদন্তি যে ভাবে অস্ট্রেলীয় ওপেনের সেমিফাইনালে উঠলেন চোখে না দেখলে তা বিশ্বাস করা কঠিন।
‘বুড়ো হাড়ে ভেলকি’ দেখালেন রজার ফেডেরার। মিলম্যানের বিরুদ্ধে টানা ছ’টা পয়েন্ট জিতেছিলেন টাইব্রেকারে। মঙ্গলবার অঘটন ঘটিয়ে ফেলেছিলেন স্যান্ডগ্রেনও। সাত–সাতটা ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিফাইনালে ফেডেরার এবার চিরশত্রু নোভাক জকোভিচের মুখোমুখি।
রড লেভার এরিনা এদিন দেখল ‘রাগী’ ফেডেরারকে। প্রথম সেটে ৬–৩ গেমে অনায়াসে জেতেন সুইস–তারকা। কিন্তু পরের দুটি সেটে ২–৬, ২–৬ গেমে উড়ে যান আমেরিকার অনামী তারকার কাছে। তৃতীয় সেট চলাকালীনই হঠাৎ মেজাজ হারান ফেডেরার, কোর্টেই অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করার জন্য। কোড ভায়োলেশন হওয়ায় আম্পায়ারের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। এরপর টানা ন’মিনিট মেডিক্যাল টাইম–আউট নিতে দেখা যায় তাঁকে। সবক’টি ঘটনাই তাঁর ক্ষেত্রে বিরল। চতুর্থ সেটে তিনবার নিজের সার্ভে ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচান। এরপর টাইব্রেকারে চারবার। শেষ পর্যন্ত জেতেন ৭–৬ (১০–৮) গেমে। পঞ্চম সেটে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ৬–৩ জিতে সেমিফাইনালে উঠে যান। ম্যাচের পর স্বীকার করে নিলেন, ‘সত্যিই এই ম্যাচ জেতার যোগ্য ছিলাম না। কিন্তু এখানে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে খুব ভাল লাগছে। অবিশ্বাস্য লাগছে।’
এই দুরন্ত জয়ে অস্ট্রেলীয় ওপেনে কখনও কোয়ার্টার ফাইনালে না হারার রেকর্ড অক্ষত রাখলেন ফেডেরার (১৫-০)। সঙ্গে মেলবোর্ন পার্কে গত ছ’টি পাঁচ সেট ম্যাচ জেতার অনবদ্য ধারাবাহিকতাও ধরে রাখলেন তিনি। এর মধ্যে গত সপ্তাহে জন মিলম্যানের বিরুদ্ধে পঞ্চম সেটের টাইব্রেকে এক সময় ৪-৮ পিছিয়ে গিয়েও ম্যাচ জয় রয়েছে। পাশাপাশি ১৯৭৭ সালে কেন রোজওয়ালের (৪২ বছর, ৬৮ দিন) পরে সব চেয়ে বেশি বয়সের খেলোয়াড় হিসেবে অস্ট্রেলীয় ওপেনের সেমিফাইনালে উঠলেন ফেডেরার। একই সঙ্গে জিমি কোনর্সের পরে (৩৯ বছর ৬ দিন, ১৯৯১ যুক্তরাষ্ট্র ওপেন) দ্বিতীয় বয়স্কতম খেলোয়াড় হিসেবে গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনালে ওঠার নজির গড়লেন তিনি। শেষ চারে তাঁর সামনে এ বার নোভাক জোকোভিচ। যে লড়াইয়ে তাঁর পাঁচ সেটের পরপর দুটি ম্যাচের ক্লান্তি কাটিয়ে ওঠাটাই সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।