মোদী জমানায় ভারতীয় অর্থনীতির অর্থনীতির বেহাল দশা নিয়ে দফায় দফায় উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন তিনি। নোবেল জয়ের পরেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা টালমাটাল বলে মন্তব্য করে মোদী সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়েছেন। এবার বিজেপিকে কটাক্ষ করে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, মুসলিমরা ভারতকে দখল করে বসবে, এমন ভয়ের কোনও ভিত্তি নেই।
সোমবার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে কলকাতার লিটারারি মিট অনুষ্ঠানে এক আলাপচারিতায় অভিজিৎ বলেন, দু’টি গোষ্ঠী যখন শিক্ষা, সম্পদ, সংখ্যায় সমান সমান, তখন এক পক্ষ ভয় পেতে পারে যে অন্য গোষ্ঠী তাকে ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু একটি পক্ষ যদি হয় সংখ্যায় কম, শিক্ষা-সম্পদে দুর্বল, তা হলে ভয় কেন? তাঁর সাফ কথা, ভারতে ক্ষমতাসীন দলের আশপাশের লোক যখন মুসলিমদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ইঙ্গিত করেন, তখন সেটা আসলে একটি জনগোষ্ঠীকে ‘বিপজ্জনক’ বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একই রকম ভাবে ভীতি উস্কানোর চেষ্টা হয় কৃষ্ণাঙ্গ আর মেক্সিকানদের ঘিরে। এরপরেই তাঁর সংযোজন ‘এটা আদৌ বাস্তবানুগ নয়। মুসলিমরা ভারতকে দখল করে বসবে, এমন ভয়ের কোনও ভিত্তি নেই।’
উল্লেখ্য, সোমবার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের প্রধান মঞ্চেই অভিজিতের নতুন বইয়ের পেপারব্যাক সংস্করণ প্রকাশিত হউ। বই প্রকাশ উপলক্ষে ইতিপূর্বে অর্থনীতির বেশ কিছু বিষয়ে মতামত জানিয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। গতকালও তার পুনরাবৃত্তি করেন তিনি। যেমন, বাজেট ঘাটতি নিয়ে মাথা ঘামানোর চাইতে দরিদ্রের ব্যয় ক্ষমতা বাড়ানো বেশি জরুরি। পরিকাঠামোয় উন্নতি এবং ব্যাঙ্ককে চাঙ্গা করতে সরকারকে টাকা ঢালতে হবে। এক সাংবাদিক সরাসরি প্রশ্ন করেন, ভারতের অর্থনীতি কি মন্দায়? জবাবে তিনি বলেন, ‘মন্দায় চলে গিয়েছে বলে আমি জানি, এমন দাবি করতে পারি না। কিন্তু যদি প্রশ্ন করেন, ‘মন্দা শুরু হয়েছে, এমন কি সম্ভব?’ তা হলে আমি বলব, হ্যাঁ।’
মন্দার সপক্ষে যুক্তি কী? ‘অর্থনীতির অনেকগুলি ইঙ্গিত এখন ১৯৯১ সালের চেয়েও খারাপ, যে বছর মোট জাতীয় উৎপাদন নেমে গিয়েছিল’ — অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যমের এই বক্তব্যকে উদ্ধৃত করেন অভিজিৎ। কেন আরও স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না? তাঁর উত্তর, ‘কারণ গত দুই-এক বছরে অসংগঠিত ক্ষেত্র কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার তথ্য হাতে নেই।’ অন্যদিকে, রবিবার জয়পুর সাহিত্য উৎসবে ছিলেন অভিজিৎ ব্যানার্জি। সেখানে বলেন, ‘যে অর্থনৈতিক শ্লথগতি ভারতকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়েছে, তা শিগগিরই ছাড়বার নয়। অনেক সময় লাগবে। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার মতো যথেষ্ট অর্থও এই মুহূর্তে আমাদের নেই।’ অর্থনৈতিক সমস্যার একটি নিদান হিসেবে ব্যাঙ্কে বিনিয়োগের কথা বলেছেন তিনি। বলেছেন, আরও অনেক ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে।