এর আগে কাশ্মীর ইস্যুতে সরব হয়েছিলেন মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যরা। মার্কিন কংগ্রেসের হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে একটি প্রস্তাব পেশের মাধ্যমে উপত্যকায় আটক প্রত্যেক রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তি ও সেখানে ইন্টারনেট-সহ সবরকম যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরায় চালু করার জন্য ভারত সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন তাঁরা। এবার সিএএ ইস্যুতে মোদী সরকারের অস্বস্তি বাড়াতে চলেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। নয়া নাগরিকত্ব আইন পাশ করানোয় মোদী সরকারকে ভয়ঙ্কর বিভেদকামী বলছে তারা।
মার্চে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও ভারতের বৈঠকের আগে অত্যন্ত নেতিবাচক কূটনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে চলেছে ভারত। এই বৈঠকে যোগ দিতে ব্রাসেলসে যাওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। তার আগে সদ্য চালু হওয়া নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন বা সিএএ এবং শক্ত হাতে কাশ্মীর পরিস্থিতি দমন করা নিয়ে অসন্তুষ্ট ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সংসদ। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সংসদের ৭৫১ জন সদস্যের মধ্যে ৬০০ জন সদস্য এই দুই বিষয়ে ছ’টি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। তাঁদের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হল সিএএ আইনের ফলে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষের দেশহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন বা সিএএ হল একেবারে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং তা কার্যকর করা হয়েছে সঠিক পদ্ধতি মেনে ও গণতান্ত্রিক উপায়ে, সংসদের দুই কক্ষে বিতর্কের পরে সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনার পরে। এই আইনের বিরুদ্ধে রয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৫৪ সদস্য বিশিষ্ট প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স অফ সোশ্যালিস্ট অ্যান্ড ডেমোক্র্যাক্টস, ১৮২ সদস্য বিশিষ্ট ইউরোপিয়ান পিপলস ডেমোক্র্যাক্টস, ৪১ সদস্যের ইউরোপিয়ান ইউনাইটেড লেফট ও নর্ডিক গ্রিন লেফ্ট, ৭৫ সদস্যের গ্রিনস/ইউরোপিয়ান ফ্রি অ্যালায়েন্স এবং ১০৮ সদস্যের রিনিউ ইউরোপ গ্রুপ।
রেজলিউশন গ্রহণের সময় প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স অফ সোশ্যালিস্ট অ্যান্ড ডেমোক্র্যাক্টসরা সমালোচনা করে বলেছিল, ‘ঘটনা হল দেশীয়করণ ও উদ্বাস্তু নীতি ভারত গ্রহণ করেছে ধর্মের ভিত্তিতে।’ ইউরোপিয়ান পিপলস পার্টির আশঙ্কা, ‘সিএএ এবং তার পরবর্তীতে যে বিপুল বিরোধিতা দেখা গেছে তার প্রভাব পড়তে পারে ভারতের অভ্যন্তরীণ ভাবমূর্তি ও অভ্যম্তরীণ স্থিতাবস্থার ওপরে।’ মোদী সরকার অবশ্য এই বিষয়টিকে পুরোপুরি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলছে। সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে এমন কোনও পদক্ষেপ করা উচিত নয় যেখানে বিশ্বের অন্য কোনও প্রান্তে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত আইনসভার অধিকার ও কর্তৃত্বের উপরে প্রশ্নচিহ্ন পড়ে যায়।
এর আগে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ১৫০ জন সদস্য দাবি করেছিলেন যাতে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তির সময় মানবাধিকারের প্রশ্ন তুলে ভারতকে কঠোর ভাবে নিষেধের তালিকাভুক্ত করা হয়। এ ব্যাপারে আগামী সপ্তাহের প্লেনারি সেশনে আলোচনা হতে পারে। এছাড়া জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে গত অক্টোবরে বিজেপি সরকার যে অবস্থান গ্রহণ করেছিল তার বিরুদ্ধেও একই রকম অবস্থান গ্রহণ করেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউরোপিয়ান ফ্রি অ্যালায়েন্স বলেছিল যে, প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে যে স্বদেশী অ্যাজেন্ডা গ্রহণ করা হয়েছে তারা তার সমালোচনা করছে। কাশ্মীরের বিশেষ সুবিধা বন্ধ করা ও ইন্টারনেট বন্ধ রাখার সমালোচনা করেছিল নর্ডিক গ্রিন লেফট।