অশান্তি যেন থামছেই না রবীন্দ্রনাথের হাতে গড়া বিশ্বভারতীতে। এবার পড়ুয়ারদের ‘ডোজ’ দেওয়ার ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই ফের উত্তেজনা ছড়াল। হ্যাঁ, মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে পাশে থাকা এক যুবকের সঙ্গে উপাচার্যের এক কথোপকথনের ভিডিও ফাঁস হয়েছে। যা দেখার পরই তাঁর পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলনের হুমকি দিল বিশ্বভারতী ছাত্র ঐক্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে দায়ের হল অভিযোগ।
প্রকাশিত ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে উপাচার্য সেদিনের সমাবেশে উপস্থিত সহকর্মীদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের ‘বিশেষ শিক্ষা দিতে’। ভিডিওটি শ্যুট করা হয়েছে জানুয়ারির ৭ তারিখ। বিজেপি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তের সিএএ সমর্থিত সেমিনারের আগের দিনই এই ভিডিওটি তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে গত ৭ জানুয়ারি বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে মোমবাতি মিছিল চলছে শান্তিনিকেতনে। প্রসঙ্গত, পৌষমেলা শেষ হওয়ার পরেও বেশ কিছু দোকান ব্যবসা করছিল মেলার মাঠে। সেই দোকানগুলি তুলতে বলপ্রয়োগ করেছিল বিশ্বভারতী। বিশ্বভারতীর উপাচার্যের বিরুদ্ধে দোকান লুট ও মহিলার শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনেছিলেন ব্যবসায়ীরা। তার বিরুদ্ধেই মোমবাতি মিছিলের ডাক দিয়েছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
যখন সেই মিছিল চলছিল, তখন বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারাও পাল্টা কর্মসূচী হিসাবে পরদিন সিএএ-র সমর্থনে বিশ্বভারতীতে ভাষণ দিতে আসা বিজেপি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তের কর্মসূচির বিরোধিতা করে স্লোগানিং করছিল। সেই সময়ই মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে উপাচার্যের কথোপকথনের ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। ভিডিওতে ‘বাইক বাহিনী নিয়ে এসে ওষুধ দেওয়ার’ নিদান দিচ্ছেন খোদ উপাচার্য।
কাকে দিচ্ছেন? পড়ুয়া, অধ্যাপকরা লিখিত অভিযোগ করে বলছেন, মিছিলে উপাচার্যের পাশে হাঁটা অচিন্ত্য বাগদির উদ্দেশ্যেই এই কথা বলছেন উপাচার্য। গত ১৫ জানুয়ারি রাতে বিশ্বভারতীতে হামলায় অভিযুক্ত এই অচিন্ত্য। এখন জেলে। অভিযোগ, উপাচার্যের মদতেই যে দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছিল, তা প্রমাণ করে দিচ্ছে এই ভিডিও। ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পরই ছাত্রদের তরফে ভিডিও সমেত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে শান্তিনিকেতন থানায়।
অভিযোগ করা ছাত্র ঐক্যের অন্যতম সদস্য ফাল্গুনী পান বলেন, ‘গত ১৫ জানুয়ারি বিশ্বভারতীর হস্টেলে এবং হাসপাতালে ঢুকে ছাত্রদের ওপর হামলা হয়। আমাদের কাছে একটা ভিডিয়ো এসে পৌঁছয়। সেই ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, উপাচার্য মহাশয় ক্যান্ডেল মার্চ-এর সময় উপাচার্য গুন্ডা বাহিনীকে নির্দেশ দিচ্ছেন, ‘তোমরা বাইক বাহিনী নিয়ে চলে এস। ওরা বদমায়েশি করতে পারে। এই তথ্য পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে উপাচার্যের কথোপকথন থেকে।’
ছাত্র ঐক্যের অপর সদস্য সোমনাথ সৌ বলেন, ‘বিশ্বভারতীর ওপর যে গুন্ডা বাহিনী আক্রমণ করেছিল, তা উপাচার্যের নির্দেশেই সরাসরি হয়েছে। প্রতিবাদ করলে ছাত্র-ছাত্রীদের দমন করার চেষ্টা করছে। আমরা ভিডিওটি পাওয়ার পর শান্তিনিকেতন থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। যদিও সেই লিখিত অভিযোগের আমরা কোনও রিসিভ কপি পাইনি। উপাচার্য মহাশয় রবীন্দ্রনাথের মাটিতে কোনও ভাবে স্বাগত নন।