রেলের যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠলেও এই ব্যাপারে বরাবরই উদাসীন রেলমন্ত্রক। ট্রেনযাত্রায় বিপদে পড়া যাত্রীদের কাছে কী ভাবে সাহায্য পৌঁছে যাচ্ছে, প্রায়ই তা টুইট করে জানাতে দেখা যায় রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলকে। কিন্তু গোয়েলের এই টুইট যে শুধুই ফাঁকা আওয়াজ তা আবার প্রমাণিত। চলন্ত ট্রেনে একটি কামরায় দু’সারি আসনের মাঝখানের করিডরে ঘণ্টা দেড়েক পড়ে রইলেন এক অচৈতন্য মহিলা। তাঁর জন্য না হল চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা, কোনও স্টেশনে না থামানো হল ট্রেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ৫০ মিনিট নাগাদ ডিব্রুগড়গামী এক্সপ্রেস মালদহ টাউন স্টেশনে পৌঁছনোর পরে ডাক্তার ডাকা হয়। তিনি এসে পরীক্ষা করে জানিয়ে দেন, মহিলার মৃত্যু হয়েছে। মৃত যাত্রীর নাম কৃষ্ণা দত্ত চৌধুরী (৫৬)। বাড়ি লেক টাউনে।
রেক সময়মতো না-পাওয়ায় ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস বুধবার নির্ধারিত সময়ের প্রায় তিন ঘণ্টা পরে, রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ কলকাতা স্টেশন থেকে ছেড়েছিল। বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে নিজের কামরায় দু’সারি আসনের মাঝখানের করিডরে কৃষ্ণা দত্ত চৌধুরী নামে এক প্রৌঢ়াকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন যাত্রীরা। বিষয়টি জানানোর জন্য কর্তব্যরত টিকিট পরীক্ষকের খোঁজ করতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি বলে যাত্রীদের অভিযোগ। রেলের বিভিন্ন নম্বরে ফোন করেও কোনও সাহায্য মেলেনি। পরে অন্য কামরা থেকে টিকিট পরীক্ষক এলেও মহিলার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়নি।
এমনিতে ট্রেনটির ভোর ৪টে নাগাদ মালদহ টাউন স্টেশনে পৌঁছনোর কথা। কিন্তু ছাড়তেই অনেক দেরি হওয়ায় বৃহস্পতিবার সেটি পৌঁছয় সকাল ৬টা ৫০ মিনিট নাগাদ। এমনিতে আজিমগঞ্জ ও মালদহের মধ্যে ট্রেনটি কোথাও থামে না। কিন্তু এ দিন বিশেষ পরিস্থিতিতে ভোরে ওই দুই স্টেশনের মাঝখানের কোনও স্টেশনে ট্রেন থামিয়ে মহিলার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হল না কেন, সেই প্রশ্নটি বড় হয়ে উঠছে।
ওই ট্রেনের বি১ কামরার যাত্রী দীপান্বিতা বাগচী জানান, ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ পাশের কামরায় গুঞ্জন শুনে গিয়ে দেখেন, এক মহিলা করিডরে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে আছেন। যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, সেই সময় ট্রেনের কোনও অ্যাটেন্ড্যান্ট বা কর্মীকে পাওয়া যায়নি। প্রথমে বি২ কামরার টিকিট পরীক্ষকের খোঁজ করা হয়। যাত্রীদের অনেকের অভিযোগ, বি২ কামরায় কোনও টিকিট পরীক্ষক ছিলেন না। অনেক ডাকাডাকির পরে বি১ কামরা থেকে টিকিট পরীক্ষক আসেন। কিন্তু তার পরেও কৃষ্ণাদেবীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। রেল পুলিশও চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে কাছাকাছি কোনও স্টেশনে ট্রেন থামানোর ব্যবস্থা করেনি। অভিযোগ, প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে ট্রেনটি মালদহ টাউন স্টেশনে পৌঁছয়। সেখানে চিকিৎসক ডেকে আনা হয়। তিনি কৃষ্ণাদেবীকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় ট্রেনযাত্রীদের অনেকেই ক্ষুব্ধ। মালদহ টাউন স্টেশনে নেমে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। অনেকেই বলতে থাকেন, মাঝ আকাশে কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে বিমান ফিরিয়ে আনা হয় বা কাছাকাছি কোনও বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। রেলের গাফিলতির অভিযোগ তুলে তাঁদের প্রশ্ন, ট্রেনের বেলায় তা হবে না কেন? মাঝখানে কোনও স্টেশনে ট্রেন থামিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে ওই মহিলা হয়তো বেঁচে যেতেন, বলছেন যাত্রীদের অনেকে।