গতবছরের মাঝামাঝি সময়ে থেকেই দেশের অর্থনীতির বেহাল দশা। যার জন্য বহুবার বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে আগামী অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার কিছুটা মাথা তুলবে বলে পূর্বাভাস শুনিয়েও ফের অর্থনীতিতে ঝুঁকি বহাল থাকার বার্তা দিল ইন্ডিয়া রেটিংস অ্যান্ড রিসার্চ। তবে জানা গেছে, শুধু এ বছর নয় আগামী অর্থবর্ষেও হয়তো রাজকোষ ঘাটতিতে শিকল পড়িয়ে রাখা সম্ভব হবে না। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, আসন্ন বাজেটে নতুন করে রাজকোষের ঘাটতি ধাপে ধাপে কমিয়ে আনার রূপরেখা পেশ করা হবে।
অর্থনীতির ঝিমুনি আর তার জেরে কর খাতে সরকারের আয় কমে যাওয়ায় চলতি অর্থবর্ষে ঘাটতির ৩.৩ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া অসম্ভব। এতদিন ঠিক ছিল, আগামী অর্থবর্ষে (২০২০-২১) তা নামিয়ে আনা হবে ৩ শতাংশে। কিন্তু পরের বারও বৃদ্ধির হার খুব বেশি বাড়বে, এমন সম্ভাবনা কম। বরং অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কেন্দ্রকে দরাজ হাতে খরচ করতে হবে। সূত্রের দাবি, সেই কারণেই রাজকোষ ঘাটতিকে ৩ শতাংশে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা অন্তত ২০২২-২৩ পর্যন্ত পিছিয়ে দিতে হবে।
নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অধিকাংশ অর্থনীতিবিদই মনে করছেন, রাজকোষ ঘাটতির রাশ কিঞ্চিৎ আলগা করলেও সমস্যা নেই। বদলে এই মুহূর্তে আমজনতার হাতে টাকা তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা বেশি দরকার বলেই মত প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যনের। সেই সঙ্গে তাঁদের যুক্তি, সব থেকে জরুরি বাজেটে ঘাটতির আসল ছবিটা তুলে ধরা।
মোদী জমানায় এটি হচ্ছে না বলে বিরোধীরা আঙুল তুলছে বেশ কয়েক বছর ধরে। অভিযোগ, কেন্দ্র বেশ কিছু খরচ বাজেটের বাইরে অন্য খাতায় দেখাচ্ছে। সরকারের ধারের বড় অংশও বাজেটের বাইরে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার খাতায় দেখানো হয়েছে। এতে খাতায়-কলমে রাজকোষ ঘাটতিতে লাগাম থাকছে। কিন্তু সরকার বাজার থেকে কতটা ঋণ নেবে, তা নিয়ে অস্পষ্টতা থাকছে। কারণ ওই ধার করেই ঘাটতি সামাল দেয় তাঁরা।
গত জুলাইয়ের বাজেটে অভিযোগ উঠেছিল, জিডিপি-র পরিমাণের নতুন হিসেব হাতে থাকলেও অর্থমন্ত্রী পুরনো হিসেব ধরেছেন। যার অঙ্ক বেশি। ফলে সেই তুলনায় ঘাটতিও কম দেখানো গিয়েছে। অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘গত বছর যেমন কোল ইন্ডিয়া ও এনটিপিসি থেকে এ বছরের রেল মাশুল বাবদ আগাম টাকা নেওয়া হয়েছিল। বেশ কিছু খরচ এ বছরের খাতায় ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। ফলে এ বছর তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছে। এখন ঘাটতি সামাল দিতে এই অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) খরচের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যে সব সরকারি প্রকল্প কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ উদ্যোগে চলে, সেখানে খরচ ছাঁটাইয়ের উপায় নেই।’
সরকারি খরচ, ঋণ বাজেটের বাইরে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার খাতায় চালান করার অভিযোগ নিয়ে অর্থ মন্ত্রক কর্তাদের দাবি, এ বার তা স্পষ্ট করে জানানো হবে। কিন্তু প্রশ্ন হল, বাজেটের বাইরে খরচ, ঋণ দেখিয়ে কৃত্রিম ভাবে রাজকোষ ঘাটতি কম করে দেখানোয় লাভ কী? অর্থ মন্ত্রকের কর্তা বলছেন, ‘এটুকু জল না-মেশালে ২০২২-২৩ সালেও ঘাটতি ৩ শতাংশে কমিয়ে আনা যাবে না।’