কলকাতা-দিল্লী-সহ দেশের প্রতিটি প্রায় প্রান্তে ‘হম কাগজ নেহি দিখায়েঙ্গে’ স্লোগান তুলে যখন সিএএ-এনআরসি-এনপলিআর বিরোধী আন্দোলন ক্রমশই আরও বড় আকার ধারণ করছে তখন দার্জিলিংয়ের সভামঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও একই আওয়াজই তুললেন। ‘কেউ কোনও কাগজ দেখতে এলে কিছু দেখাবেন না’ – বুধবার ঠিক এই ভাষাতেই আন্দোলনের রাজনৈতিক রং বিচার না করে কাগজ না দেখানোর বিষয়টি বড় করে তুলে ধরে নাগরিকত্ব আন্দোলনকে বৃহত্তর মঞ্চ দিতে চাইলেন মমতা।
প্রসঙ্গত, এনআরসি-সিএএ-এনপিআর নিয়ে প্রথম থেকেই সরব তৃণমূল নেত্রী। সম্প্রতি এই ইস্যুতে বেশ কয়েক বার তাঁকে পথে নামতে দেখেছে কলকাতা। পাশাপাশি, জেলায় জেলায়ও পদযাত্রা করে কেন্দ্রের এই জনবিরোধী নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে তৎপর হয়েছেন তিনি। সেই প্রতিবাদের আঁচকে পাহাড়ে ছড়িয়ে দিতেই সিএএ-বিরোধী পদযাত্রা-সহ একগুচ্ছ কর্মসূচী নিয়ে সোমবার ৫ দিনের উত্তরবঙ্গ সফরে এসেছেন মমতা। পূর্ব পরিকল্পনা মত গতকাল সফরের তৃতীয় দিনে দার্জিলিংয়ে সিএএ-বিরোধী পদযাত্রা করেন তিনি।
ভানুভবন থেকে শুরু করে চার কিলোমিটার ঘুরে মিছিল শেষ হয় চকবাজারের কাছে মোটরস্ট্যান্ডে। সেখানেই জনসভা করেন তিনি। দার্জিলিংয়ের বিধায়ক এবং সাংসদ দুই-ই বিজেপির। তা সত্ত্বেও মমতার পদযাত্রা জনসমাগমের নিরিখে ছিল নজরকাড়া। তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে আতঙ্ক এতটাই যে, অনেকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছেন, এসব হলে আমাদের কী হবে? বক্তৃতায় এর জবাব দিয়ে মমতা বলেন, ‘আমরা সকলেই দেশের নাগরিক। সকলকে বলব, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আপনার নাগরিকত্ব কে ছিনিয়ে নেবে?’
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার লখনউয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ হুমকি দেন, ‘যাঁরা যতই বিরোধিতা করুন, সিএএ প্রত্যাহার করা হবে না।’ গতকাল পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে মমতা বলেন, ‘মনে রাখবেন, যতক্ষণ না এনআরসি, সিএএ, এনপিআর তুলে নেবে, তত দিন এই আন্দোলন চলবে। এটা আমাদের অধিকারের লড়াই। এই লড়াই আমাদের নাগরিকত্ব, ইজ্জত, জমি, মাটি বাঁচানোর লড়াই। আমরা এই লড়াই করতে তৈরি।’ শাহকে কটাক্ষ করে মমতা এ-ও বলেন যে, ‘কাল দেখেছি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বড় বড় কথা বলেছেন। আমাদের বলছে মিথ্যাবাদী, তা হলে সত্যিটা কী আপনারা বলুন।’
কেন্দ্র যা-ই বলুক, এনপিআর-এর ফর্মে মা-বাবার জন্ম তারিখ ও জন্মস্থান সম্পর্কিত তথ্য দেওয়া যে আসলে বাধ্যতামূলক, গতকাল ফের সেই দাবি করে কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে মমতার প্রশ্ন, ‘তা হলে বিষয়টি ফর্মে রেখেছেন কেন?’ ‘বেহাল’ আর্থিক পরিস্থিতি আড়াল করতেই ‘ছুপা রুস্তমের’ মতো এই আইন তৈরি করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তার পরেই বিজেপি নেতৃত্বকে নিশানা করে মমতার তোপ, ‘আমরা কিছু বললে বলবে সবাই পাকিস্তানি। আরে আমরা কেন পাকিস্তানি হব? আপনি কেন প্রতিদিন পাকিস্তানের কথা বলেন? পাকিস্তান কি আপনার বড় বন্ধু?’
গতকাল আবারও বিরোধী ঐক্যে জোর দিতে বলেন মমতা। অন্য রাজ্যগুলির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা এনপিআর-এর বৈঠকে গেলেন কেন? বিরোধীদের বলছি, এনপিআরের বিরুদ্ধে একজোট হতে হবে আমাদের৷ সিদ্ধান্ত নিন যে আমরা এনপিআর মানব না।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘অনলাইনে হয়ে যাবে বলছে। অনলাইনে কি চাল সিদ্ধ হয়, না স্নান হয়?’ কেন্দ্রকে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘চালাকি করবেন না। বলছে মোবাইল অ্যাপে সব হয়ে যাবে। অ্যাপে সব নাগরিক হয়ে যাবে? এর থেকে বড় মিথ্যে, বড় চিটিংবাজি আর হয় না।’