টিম গেমের জোরেই সিরিজে দারুণ প্রত্যাবর্তন ‘টিম ইন্ডিয়া’র। প্রথম ম্যাচে ১০ উইকেটে পর্যুদস্ত হওয়ার পর কড়া সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছিলেন বিরাট কোহলিরা। তিল তিল করে গড়ে তোলা সাফল্যের সাম্রাজ্য আচমকাই টলে গিয়েছিল অজি হানায়। কিন্তু হাল ছাড়েননি তাঁরা। পিছিয়ে পড়েও সিরিজে ‘টিম ইন্ডিয়া’র দুরন্ত কামব্যাকের বহু ইতিহাসের সাক্ষী রয়েছে ক্রিকেট দুনিয়া। শুক্রবার রাজকোটে যেন তারই পুনরাবৃত্তি ঘটল লোকেশ রাহুল, কুলদীপ যাদবদের সৌজন্যে। দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৩৬ রানে হারিয়ে সিরিজেও সমতা (১-১) ফেরাল ভারত। এই জয় বাগিচা শহরে নির্ণায়ক ম্যাচে বিরাট বাহিনীকে বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে। কিন্তু শিখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মার চোট অবশ্য উদ্বেগে রাখবে ‘মেন ইন ব্লু’কে।
প্রত্যাশিত ভাবে তিন নম্বরেই নেমে কোহলি নিজের ইনিংসের শুরুতেই জাম্পাকে পেয়েছিলেন। কিন্তু জাম্পা তাঁর দূর্গে কোনও ছিদ্র খুঁজে বার করতে পারেননি। ঋষিসুলভ ভঙ্গিতে এই লেগস্পিনারকে সামলেছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, অহং বোধকে প্রাধান্য দিয়ে হঠকারী কোনও শট খেলবেন না। তা জাম্পা যতই তাঁর আত্মমর্যাদায় আঘাত করুন না কেন। কোহলি (৭৬ বলে ৭৮) ইনিংস গড়েছেন, উপযুক্ত সময়ে অস্ট্রেলিয়ার সেরা ফাস্ট বোলার প্যাট কামিন্সকে স্বপ্নের কভার ড্রাইভ মেরেছেন। আর ভারতকে ৩৬ রানে জিতিয়ে সিরিজ ১-১ করতে সাহায্য করেছেন।
কোহলির সেই জাম্পার বলেই আউট হলেন। তবে উইকেটটা যতটা না জাম্পার, ততটাই ফিল্ডার অ্যাশটন অ্যাগারের। স্কোরবোর্ডে অবশ্য দেখাবে কোহালি কট স্টার্ক বো জাম্পা। যাঁরা খেলাটা দেখলেন, তাঁরা জানেন, এই ‘রিলে ক্যাচ’-এর আসল নায়ক অ্যাগারই। কোহলির ক্যাচটা লং অফের বাউন্ডারি লাইনে ধরার পড়ে অ্যাগার যখন ভারসাম্য হারিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন দড়ির ও-পাশে, তিনি বলটা ছুড়ে দিলেন স্টার্কের দিকে। স্টার্ক চাইলেও ওই ক্যাচ ফস্কাতে পারতেন না।
জয়ের জন্য ৩৪১ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার (১৫) ও অ্যারন ফিনচ (৩৩) দ্রুত আউট হন। যদিও প্রাথমিক ধাক্কা সামলে মার্নাস লাবুশানেকে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে ৯৬ রান যোগ করেন বহু লড়াইয়ের পোড় খাওয়া সৈনিক স্টিভ স্মিথ। একটা সময় পর্যন্ত ম্যাচ ছিল ফিফটি-ফিফটি। কঠিন সময়ে স্পিনাররা ম্যাচে ফেরায় ‘টিম ইন্ডিয়া’কে। জাদেজার বলে ৪৬ রানে আউট হন লাবুশানে। অ্যালেক্স কেরিকে (১৮) তুলে নেন কুলদীপ। তবে তাঁর দিনের সেরা শিকার অবশ্যই স্মিথ। সেঞ্চুরির আশা জাগিয়েও তিনি কুলদীপের বলে ৯৮ রানে প্লেড অন হন। ৪৪তম ওভারে সামি প্রথম দু’টি বলে টার্নার (১৩) ও কামিন্সকে (০) আউট করে হ্যাটট্রিকের আশা জাগিয়ে জয় আরও নিশ্চিত করে তোলেন। অ্যাগরের সংগ্রহ ২৫ রান। ঝোড়ো ব্যাটিং উপহার দেন রিচার্ডসন (১১ বলে ২৪)। বুমরাহর বলে জাম্পা আউট হতেই ৩০৪ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস।
ম্যাচের পর অ্যারন ফিঞ্চ হয়তো ভাবছিলেন, প্রথমে ফিল্ডিং নেওয়া ভুল হয়েছে। টস জেতার ফায়দা তুলতে পারেননি মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্সরা। রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান প্রারম্ভিক জুটিতে তোলেন ৮১ রান। তখনই বোঝা গিয়েছিল, আচমকা কোনও বিপর্যয় না ঘটলে রানের পাহাড় খাড়া করবে ‘টিম ইন্ডিয়া’। ইনিংসে কোনও সেঞ্চুরি নেই। তবুও ৬ উইকেটে ৩৪০ রান তুলতে সফল হয় কোহলি ব্রিগেড।