প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়াই হোক বা অশালীন-বেফাঁস মন্তব্যের ফোয়ারা ছোটানো – সবেতেই গেরুয়া শিবিরের জুড়ি মেলা ভার। বিরোধী দলের নেতানেত্রীই হোক বা বিরোধী মত পোষণকারী কোনও বিদ্বজন, তাঁদের বিঁধতে গিয়ে বরাবরই বেপরোয়া মনোভাব দেখিয়েছেন বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা। তবে সেই তালিকায় একটু ওপরের দিকেই নাম থাকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের। তাঁর ‘কুকুরের মতো মারব’ মন্তব্যের জেরে তৈরি হওয়া বিতর্কের রেশ এখনও কাটেনি। তারই মধ্যে সরাসরি সিএএ বিরোধী বুদ্ধিজীবীদের আক্রমণ করে ‘নেমকহারাম’, ‘ননসেন্স’ বলে বসেছিলেন তিনি। আর দ্বিতীয় দফায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি হয়ে আরও বেলাগাম দিলীপ ঘোষ। এবার বিরোধী ও বুদ্ধিজীবীদের আক্রমণ করতে গিয়ে শালীনতার সব সীমা ছাড়িয়ে গেলেন তিনি। শুক্রবার বুদ্ধিজীবীদের নিশানা করে দিলীপের কটাক্ষ, পরজীবী বুদ্ধিজীবীরা অন্যের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে চিরদিন ফূর্তি করেছেন।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতির পদে দ্বিতীয়বার অভিষেক হয়েছে দিলীপের। আর তার ঠিক পরের দিনই বিতর্কের বোমা ফাটিয়ে আবার খবরের শিরোনামে তিনি। শুক্রবার নয়া নাগরিক আইনের সমর্থনে হাওড়ায় এক জনজাগরণ যাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল। সেই সভামঞ্চ থেকেই বুদ্ধিজীবীদের বিঁধতে গিয়ে তাঁদের শয়তান পর্যন্ত বলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। দিলীপের কথায়, ‘পরজীবী বুদ্ধিজীবীরা অন্যের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে চিরদিন ফূর্তি করেছেন। কোথায় ছিলেন বাংলাদেশে আমাদের পূর্বপুরুষদের উপরে অত্যাচার করা হয়েছে যখন, বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, পুকুরের মাছ চুরি করা হয়েছিল, জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, মা-বোনেদের দিনের আলোয় ধর্ষণ করেছিল, ফসল নষ্ট করেছিল। তখন পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবীদের রাস্তায় নামতে দেখেনি। শয়তানরা আমাদের খায় পরে বেঁচে থাকে আমাদেরই বিরোধিতা করে।’
গতকাল সাংবাদিকদের কাছে নিজের কার্যকলাপ ও বেলাগাম আচরণ নিয়ে ব্যাখ্যাও দেন দিলীপ। তাঁর দাবি, ‘বিজেপি যা চায় আমি তা-ই করি, তা-ই বলি। আমি তো মাধ্যম। আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে সে-ও একই কাজ করবে। আমি সেই কাজটা ভাল করে করতে চাই। বিশিষ্টজনেরা কী বলেন, তাতে আমার কিছু যায়-আসে না। আমার কাছে দলই গুরুত্বপূর্ণ। বিশিষ্টজনেদের কাছে রাজনীতিকদের যাওয়ার কথা। এখানে তাঁরাই রাজনীতিকদের কথায় রাস্তায় নেমে পড়েন। তাই আমার কাছে ওঁরা নির্বোধ।’ দিলীপের বক্তব্যের নিন্দায় ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছে রাজনৈতিক মহল। তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম যেমন বলেছেন, ‘কোনও রাজনৈতিক নেতা যখন নোংরামির এই স্তরে নেমে আসেন তখন তাঁর কথার প্রতিক্রিয়া দিতেও ঘৃণা হয়। এই সব অশিক্ষিত, বর্বর, রুচিহীনদের কাজে রাজনীতির পরিবেশ প্রতিদিন বিষিয়ে উঠছে। তবে যেমন দল, তার তেমন নেতা। মানুষ বুঝে নেবে।’ সকলেরই এক কথা, দিলীপ ঘোষের কাছ থেকে এটাই প্রত্যাশিত।