৮ নভেম্বর, ২০১৬। বছর তিনেক আগের এই একটি দিন, যা আজও প্রায় বেশিরভাগ দেশবাসীর কাছেই দুঃস্বপ্নের মতো। হঠাতই ওদিন সন্ধ্যায় ৭টায় দূরদর্শনে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে এলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সকলেরই চোখ তখন টেলিভিশনের পর্দায়। তারপরই হল সেই বিশেষ ঘোষণা, রাত বারোটার পর থেকে গোটা দেশে বাতিল পুরোনো পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট। মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ল দেশবাসীর। তার পর থেকে ঠিক ৩ বছর কেটে গেছে। কিন্তু নোটবন্দীর সুফল কোথায়? সুফল তো মেলেইনি বরং আরও বেড়েছে জাল নোটের কারবার। এখন সরকারের নিজস্ব তথ্যই বলছে, নতুন নোটগুলির এইসব নিরাপত্তার গণ্ডি পেরনো মোটেও কঠিন নয়। বরং জাল নোটের কারবার বন্ধে চালু হওয়া ২ হাজারের নোটই সবচেয়ে বেশি জাল হচ্ছে। নোট বাতিলের পর গোটা দেশে যত জাল টাকা উদ্ধার হয়েছে তার ৫৬ শতাংশের বেশি মোদী সরকারের চালু করা ২ হাজার টাকার নোট। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর সর্বশেষ রিপোর্টে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে চলে এসেছে।
এনসিআরবির রিপোর্টে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবণতা সামনে আসছে। জাল ২ হাজার টাকার জাল নোট উদ্ধারের অধিকাংশ ঘটনা হাতে গোনা কিছু রাজ্যে সীমাবদ্ধ। এক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে গুজরাত। ২০১৮ সালের শেষ পর্যন্ত গুজরাত থেকে ৩৪ হাজার ৬৮০টি জাল ২ হাজারের নোট উদ্ধার হয়। যার সম্মিলিত পরিমাণ ৬.৯৩ কোটি টাকা। তারপর আছে তামিলনাড়ু (২.৮ কোটি) ও উত্তরপ্রদেশ (২.৬ কোটি)
নোটবন্দির সমর্থনে প্রধানমন্ত্রীর দাবি ছিল, এই সিদ্ধান্তের ফলে জঙ্গি সংগঠনগুলির আর্থিক মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে। তিন বছর পর দেখা যাক, নোটবন্দির ফলে কতটা ‘শুদ্ধিকরণ’ হল দেশীয় অর্থনীতির। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো তাদের সর্বশেষ অ্যানুয়াল রিপোর্ট ‘ক্রাইম ইন ইন্ডিয়া’য় বলেছে, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে দেশজুড়ে মোট ৪৬.০৬ কোটি টাকার জাল নোট উদ্ধার হয়েছে। তার মধ্যে ৫৬.৩১ শতাংশই ২ হাজার টাকার নোটে উদ্ধার হয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০১৭ সালে যে পরিমাণে জাল ২ হাজার টাকার নোট উদ্ধার হয়েছিল, ২০১৮ সালে তা আরও বেড়েছে। ২০১৭ সালে উদ্ধার হওয়া জাল টাকার ৫৩.৩০ শতাংশ ছিল ২ হাজার টাকার নোটে। আর ২০১৮ সালে এই পরিমাণটা ছিল ৬১.০১ শতাংশ।