চাপের মুখে পড়ে জাতীয় জনগণনা পঞ্জী (এনপিআর)-র চূড়ান্ত তালিকা থেকে প্যান কার্ডের নম্বর দেওয়ার বিষয়টি ছেঁটে ফেলেছে কেন্দ্র। তবে এবার তাদের নয়া ফতোয়া, মাতৃভাষা কী তা জানাতে হবে এনপিআর সমীক্ষায়। কিন্তু এ নিয়ে চরম আপত্তি তুলল তৃণমূল।
উল্লেখ্য, আগামী ১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশ জুড়ে শুরু হতে চলেছে জনগণনার প্রথম পর্বের কাজ। জনগণনার প্রথম ধাপে মূলত প্রত্যেক নাগরিকের বাড়ি চিহ্নিতকরণ হবে। একই সঙ্গে তথ্য সংগ্রহ করা হবে জাতীয় জনগণনা পঞ্জী (এনপিআর)-র। এপ্রিল থেকে চূড়ান্ত কাজ শুরুর আগে দেশের সব রাজ্যে পাইলট বা প্রি-টেস্টের কাজ চালিয়েছিল রেজিস্টার জেনারেল অ্যান্ড সেন্সাস কমিশনার অব ইন্ডিয়া (আরজিসিসিআই)।
প্রায় ৩০ লক্ষ জনগণের মধ্যে চালানো ওই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, আধার কার্ড বা ভোটার কার্ড দেওয়া ঐচ্ছিক হলেও, তা দিতে বিশেষ কোনও সমস্যা নেই জনগণের। কিন্তু প্যান নম্বর চাইলেই পিছিয়ে যাচ্ছেন অধিকাংশ মানুষ। কারও দাবি, তাঁর কাছে প্যান কার্ড নেই। কেউ আবার বিষয়টি ঐচ্ছিক বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন।
অর্থকরী বিষয় জড়িয়ে থাকায় জনতার মনে প্যান দেওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে বলেই মনে করেছেন অনেকে। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, যাঁরা করদাতা তাঁদের আধার কার্ডের সঙ্গে প্যান যোগ করা থাকে। সুতরাং কোনও ব্যক্তির আধার নম্বর থাকলেই তার প্যান কার্ড সংক্রান্ত তথ্য চাইলে অনায়াসে জেনে নিতে পারে সরকার।
এমনিতেই এনপিআর নিজেদের রাজ্যে করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে বাংলা, কেরালা এবং কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলি। তাই বিতর্ক যাতে আর না বাড়ে সেজন্য প্যান কার্ডের বিষয়টি চূড়ান্ত প্রশ্নমালার বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে শুরুতে এনপিআর তালিকায় না-থাকলেও কোনও ব্যক্তির মাতৃভাষা কী, তা অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, এতে দেশের কত শতাংশ মানুষ কোন ভাষায় কথা বলেন, তা জানা সম্ভব হবে। ফলে কোনও রাজ্যে কোনও বিশেষ ভাষার মানুষের স্থানান্তর (মাইগ্রেশন) কত হয়েছে, তা ফুটে উঠবে। যে তথ্যের ভিত্তিতে সেই রাজ্যে অন্য কোনও ভাষার স্কুল বা সেই ভাষাকে সরকারি ভাবে দ্বিতীয় বা তৃতীয় ভাষার স্বীকৃতি দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে কি না তা বোঝা যাবে।
তবে তৃণমূলের তরফে এক নেতার অভিযোগ, ‘পরিকল্পিত ভাবে ভাষার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকারের লক্ষ্যই হল দেশে কোন রাজ্যে কত বাংলাভাষী মানুষ রয়েছে তা চিহ্নিত করা। আর তাঁরা যদি মুসলমান হন, তখন তাঁদের বাংলাদেশি তকমা দিয়ে তাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নেবে মোদী সরকার।’
এনপিআর প্রশ্নমালার আর একটি বিতর্কিত বিষয় হল বাবা-মায়ের জন্ম-তারিখ ও জন্মস্থান জানানো। বিরোধীদের বক্তব্য, বাবা-মায়ের জন্ম-তারিখ বা জন্মস্থান অনেকেরই জানা থাকে না। তাছাড়া, কারও বাবা-মা ভারতের বাইরে জন্মে থাকলে তাঁর নাগরিকত্ব ঘিরে প্রশ্ন তৈরি হবে। বিশেষ করে তিনি যদি মুসলিম হন। তখন তাঁর নাম ঢোকানো হবে সন্দেহজনক ভোটার তালিকায়। পরে এনআরসি করার সময়ে যাতে তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব হয়।
যদিও কেন্দ্র তথা আরজিসিসিআই-এর কর্তাদের দাবি, এনপিআরের সঙ্গে এনআরসি-র কোনও সম্পর্ক নেই। তা ছাড়া, এনপিআরের মাধ্যমে কোনও সন্দেহজনক ভোটার তালিকা তৈরি করা হবে না। কিন্তু আসামের চিত্র দেখে সিঁদুরে মেঘই দেখছেন বিরোধীরা।