কয়েক সপ্তাহ ধরেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন(সিএএ), এনআরসি, এনপিআরের বিরুদ্ধে উত্তাল গোটা দেশ। বিরোধী দলগুলির পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই স্বতস্ফূর্তভাবে পথে নামছেন মানুষ। প্রতিবাদের আগুন জ্বলছে সর্বত্র। সেই আঁচ পৌঁছে গিয়েছে গঙ্গাসাগরেও। নাগারা বরাবর রাজনীতি বিমুখ। ধর্ম নিয়ে মেতে থাকেন সব সময়। তবে এনআরসি ও এনপিআর নিয়ে ক্ষুব্ধ সাগরের নাগা সাধুরাও। এনআরসির বিরুদ্ধে মুখ খুলে, ভারতের সনাতন হিন্দু ধর্মের মধ্যে বিভেদের কোনও জায়গা নেই বলে সাফ জানিয়ে দিলেন তাঁরা। নাগাদের অভিমত, পরম্পরায় ধর্মের বন্ধনে এই দেশ গড়ে উঠেছে। এই নাগরিকত্ব আইন সেই বন্ধনকে ছিঁড়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের। আসামের অভিজ্ঞতা থেকে আরও বেশি ভীত তাঁরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহকে ভেবে দেখার অনুরোধও করল নাগাদের একাংশ।
মেলায় ২ নম্বর রাস্তা থেকে কপিলমুনি মন্দিরে ঢোকার পেছনের রাস্তার কুঠরিতে বসে আছেন আচার্য মামলেশ্বর গিরি। মামলেশ্বর নাগাদের জুনা আখড়ার প্রতিনিধি। দীর্ঘদিন ধরে এই মেলায় আসছেন। জন্ম এই রাজ্যের নদিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায়। পূর্বপুরুষ বাংলাদেশের বাসিন্দা ছিলেন। একসময় ছিন্নমূল হয়ে এ রাজ্যে চলে আসেন। পরে সন্ন্যাস নিয়ে এলাহাবাদ চলে যান। রবিবার এনআরসি নিয়ে তাঁর ক্ষোভ ঝরে পড়ে। মধ্য পঞ্চাশের মামলেশ্বর গিরি বলেন, ‘কে কোথায় জন্মেছি, সেটা বড় কথা নয়। এখন আমরা কোন দেশে বাস করছি সেটা বড় কথা। সবার পূর্বপুরুষের নথি কি আছে? হলফ করে বলতে পারি, নেই। কিন্তু সরকার তাই চাইছে। মানুষ আতঙ্কিত। আর ধর্মের ভিত্তিতে ভাগাভাগি চাই না। এদেশে হিন্দু, মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টান সবাই একসঙ্গে বড় হয়েছি। এটাই আমার দেশের বৈচিত্র।’
নোটবন্দীর কথাও একবার স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘নোটবন্দী করে কী লাভ হল? দেশের অর্থনীতি তলানিতে এসে ঠেকেছে। মোদী ব্যর্থ।’ আবার আসামের কামাখ্যা থেকে এসেছেন থানাপতি মহন্ত নিত্যানন্দ গিরি। এ রাজ্যের হুগলিতে আশ্রম আছে তাঁর। আসামে এনআরসির বিভীষিকা খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। তাই রীতিমতো ক্ষুব্ধ। মধ্য চল্লিশের নিত্যানন্দ বলেন, ‘আসামে এনআরসির নামে কী হয়েছে তা দেশের মানুষ দেখেছেন। খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এখন বলা হচ্ছে সারা দেশে এনআরসি চালু করা হবে। এটা অমানবিক। এভাবে কোনও দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া যায় না। জুনা আখড়া থেকে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আর এনআরসি নিয়ে আগে সঠিক প্রচার হোক। না হলে আরও সমস্যা হবে।’ সনাতন ধর্মের সাধক নাগাদের এ হেন মুখ খোলায় গেরুয়া শিবিরকে যে বেজায় অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।