খুব সতর্ক হন। চোখ কান খোলা রেখে, বোধবুদ্ধি কাজে লাগিয়ে যেকোন সিদ্ধান্তে উপনীত হোন এসব সময়। নাগ-নাগিনীরা চারদিকে ফেলছে বিষাক্ত নিশ্বাস। চিল-শকুন ভোঁ ভোঁ করে চক্কর কাটছে, হায়না স্থির হয়ে বসে দোরগোড়ায়। রাজনীতিতে সদ্যজাতটি ছোঁ মেরে নিয়ে পালাবে বলে। খুবলিয়ে খাবে বলে। ছোবল মেরে নীলবর্ণ করবে বলে।
১).
না, ঐশী ঘোষ ওনার মতো পাকা অভিনেতা নন। ওনার মতো মিথ্যেবাদী, ভন্ড হয়ে উঠতে পারেনি এখনো৷ তাই ওই হাতের আর মাথার আঘাতটা সেটা সত্যিকারের। ওই এক ডজন সেলাই আর প্লাস্টারটা ও। অনেকে প্রতিবিম্ব চিত্র বা mirror image দেখিয়ে প্রমাণ করতে চাইছে ঐশী প্লাস্টারটা খুশি মতো এ হাত ওহাতে পরে নিচ্ছে। আসলে একটা নোংরা খেলা খেলছে শকুনের দল। একটা সাধারণ ছবিকে rotate করে দিলেই বাঁহাতের প্লাস্টার, ডানহাতে চলে আসে ফিজিক্সের সূত্র মেনে। ঠিক তাই করা হয়েছে৷
২).
ঐশী ঘোষের একটা ভিডিও ভাইরাল করছে আইটি সেল। সেখানে মুখোশ পরা লোকগুলোর পিছনে ঐশীকে দেখা যাচ্ছে। দিল্লি পুলিশ ও সন্দেহভাজনদের মধ্যে ঐশীকে রেখেছে। ফেলুদা আমাদের সেই গোড়ার দিকে শিখিয়েছে, কোন জায়গায় ক্রাইম হলে, সেখানে যারা উপস্থিত তারা কেউ সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ যায় না। এমনকি যে ফেলুদাকে তদন্ত করার দায়িত্ব দিয়েছে সে ও বাদ যায় না। এখানে ও সন্দেহভাজনের তালিকাতে ঐশী আছে কারণ সে গোটা ছাত্রসংসদের সভানেত্রী। নেতৃত্ব দিয়েছেন ছাত্রদের। সন্দেহভাজনকে অভিযুক্ত প্রমাণ করতে হয়। সেটা ঐশী ও চাইছে৷ সব জায়গায় সে যে ছিল নিজে বলছে। পাশাপাশি এটাও বলছে যে একটা ও ছবিতে তাকে লোহার রড, লাঠি নিয়ে দেখা গেছে? পাথর ছুঁড়তে দেখা গেছে? না। সব সিসিটিভি প্রকাশ করার দাবী জানিয়েছে তারা৷
এবার আসি ভিডিওটাতে। দুপক্ষের কথা শুনে এই লেখা। ভালো করে আবার ভিডিওটা দেখে বিচার করবেন নিজে। মুখোশধারীরা আসছে সোজা একটা রাস্তা দিয়ে৷ ঐশী এলো ছবির বাঁদিক থেকে৷ মুখোশধারীরা ভিতরে ঢুকে গেল। ঐশী তার পরে এলো। পিছনে আরো কিছু ছেলে৷ তারা কেউ মুখোশ পরে নেই৷ ঐশী উত্তেজিত হয়ে কিসব বলছে ওদের আর হাতের ইশারায় দেখাচ্ছে কি সব। ঐশীদের বয়ানে, ঐশী মুখোশধারীদের দেখতে পায় আর ওর বন্ধুদের বলে ভিতরে গিয়ে ওদের আটকাতে। এখান থেকে কী প্রমাণ হয়?
প্রমাণ করতে হবে যে ঐশী মিথ্যেবাদী, ঐশী দেশদ্রোহী, ঐশী পাকিস্তানের দালাল। কানহাইয়াকে ও ঠিক একইভাবে এই দেগে দেওয়া হয়েছিল। এবার সমস্যাটা অন্য। এবার মহিষাসুরদের সমস্যা অন্য জায়গায়। একরত্তি সাধারণ দেখতে একটা মেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ক্যাম্পাস থেকে হাসপাতালে যাচ্ছে তারপর এক ডজন সেলাই মেরে, মাথায় ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে, হাতে প্লাস্টার লাগিয়ে ফের ক্যাম্পাসে ফিরে আসছে মিডিয়ার মুখোমুখি, চাঁচাছোলা ভাষায় বলছে আরএসএস এর শেষ দেখে ছাড়বো, এই Optics বামেদের মহাশত্রু, মধ্যবিত্তের মধ্যবিত্ত মানুষ ও হাঁ করে দেখে।
ঐশীদের পাশে থাকুন। ছাত্র আর মহিলারাই এই দানবদের ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছে। ভোটে জিতে আসা ফ্যাসিস্ট ও দুবার ভাবে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে বা মহিলাদের উপর লাঠি আর গুলি চালানোর আগে। ওদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে কোন সরকার টিকতে পারেনি। শাহিনবাগ হোক, পার্ক সার্কাস ময়দান হোক ঐশীদের বিক্ষোভে হোক, চিল-শকুন-হায়নাদের থেকে শীতের রাতে, খোলা আকাশের নিচে ওদের বাঁচান। আগলে রাখুন। আপনি মাঠে নেমে লড়াইটা করছেন না। ওরা যেভাবে হোক কলরবে কোলাহলে কিছু একটা করছে।
ঐশী আমাদের মতো মানুষের কথায় বিচলিত না হয়ে এগিয়ে যাও। সবে অগ্নিস্নাত হয়েছো। এরপর আরো অনেক বুলেট পয়েন্ট ব্ল্যাংক থেকে মারা হবে। ফিদেলের মতো ডজ করতে করতে এগিয়ে যাও। আমরা আছি। তোমার পাড়ার জেঠু আছে, তোমার অশীতিপর দিদা আছে, তোমার কয়েকশো বন্ধু আছে, দলমত নির্বিশেষে এতো সহযোদ্ধা আছে, তুমি কমরেড বলে অচেনা মানুষটাকে মিছিলে ডেকেছিলে সে আছে, দিল্লি পুলিশের কনস্টেবল যে চুপিচুপি তোমার দাবীকে সমর্থন জানিয়ে গেল সে আছে। এই সব্বার ভালোবাসা আর আগলে রাখার শক্তি অনেক। ভালোবাসার শক্তি অনেক। ঘৃণার রাজনীতির থেকে অনেক শক্তিশালী।
হ্যারি পটারের মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ম্যাজিকটা দেখিয়ে গেছিল হ্যারিকে বাঁচিয়ে দিয়ে। ভল্ডেমর্ট যখন ” আভাদা কেডাভ্রা” বলে হ্যারিকে মারতে গেছিল, ওর মা লিলি ছোট্ট হ্যারিকে জাপ্টে ধরে ছিল। একটা ও আঁচড় লাগতে দেয়নি। এই অসম্ভব পবিত্র সম্পর্ক, ভালোবাসার তেজ ভল্ডেমর্ট সহ্য করতে পারেনি। সে ভস্মীভূত হয়ে গেছিল। ডাম্বল্ডোরের কথায়, “If there is one thing Voldemort cannot understand, it is love.” গোডসেরা ভালোবাসা ঠাহর করতে পারেনা ঘৃণা ছড়াতে ছড়াতে।
যারা লড়তে লড়তে ক্লান্ত, মিছিলে মিটিংয়ে অংশ নিতে নিতে হতোদ্যম, যারা কমিটির পর কমিটি গায়ে মেখে যুগ যুগান্তর ধরে প্রাজ্ঞ, তারা ঐশীদের জায়গা ছাড়ুন, আগলে রাখুন সবটুকু দিয়ে। একটা আঁচড় ও যেন না লাগে। তার জন্য মরতে হয় মরা যাবে খনে। আগামীর হ্যারি – রন- হারমায়োনিদের একটা সুন্দর পৃথিবী উপহার দিয়ে যেতে হবেই৷ ম্যাজিকে বিশ্বাস রাখুন। খেলা ঘুরছে।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত