ফের প্রকাশ্যে চলে রাজ্যের গেরুয়া শিবিরের অন্তর্কলহ। এবং তা একেবারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শহরে পা রাখার ঠিক আগেই। হ্যাঁ, আজ শহরে আসছেন মোদী। কিন্তু তার ঠিক চব্বিশ ঘন্টা আগে, শুক্রবার বেশ বেনজির ভাবে সামনে চলে এল তাঁর দলের রাজ্য নেতৃত্বের অভ্যন্তরীণ তিক্ততা। সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন)-এর সঙ্গে তাঁর দুই সহকারীর ‘মধুর’ সম্পর্কের কথা অজানা ছিল না বিজেপি কর্মীদের। কিন্তু এবার এক টুইটের দৌলতে পাঁচকান হয়ে গেল দলের অন্দরের সেই কথা।
প্রসঙ্গত, মোদীর সফরের চূড়ান্ত প্রস্তুতি পর্বে কলকাতায় এসেছেন মোদী মন্ত্রীসভার সদস্য তথা জাহাজ প্রতিমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য। গতকাল তিনি রাজ্য বিজেপির সদর দফতরেও যান। আর সেই পর্বকে ঘিরেই প্রকাশ্যে এসেছে তিক্ততা। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায় শুক্রবার একটা টুইট করেন। যে টুইটে দুটি ছবি রয়েছে। ছবিতে সুব্রত নিজে তো রয়েছেনই। রয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাণ্ডব্য, সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির অন্যতম সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার, আর এক সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই ছবিদুটির সঙ্গেই ক্যাপশন হিসেবে সুব্রত লিখেছেন, রাজ্য বিজেপির বিশেষ বৈঠকে উপস্থিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং রাজ্য নেতৃত্ব। এরপরই সুব্রতর ওই টুইটটি তুলে ধরে টুইট করেন রাজ্য বিজেপির সহকারী সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কিশোর বর্মণ। তিনি লেখেন, ‘দুর্ভাগ্য আমার, এই রাজ্য বিজেপির বিশেষ বৈঠকের কোনও সূচনা দুই সহ সংগঠন সাধারণ সম্পাদককে দেওয়া হয়নি।’ একইসঙ্গে সুব্রতকে কটাক্ষ করে কিশোর এ কথাও লেখেন, ‘আপনার টুইট দেখে জানলাম। ধন্যবাদ।’
বিজেপি নেতার এই টুইটেই শুরু হয় জোর গুঞ্জন। বিজেপির নেতারা পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেন না, এমনটা নয়। কিন্তু এ বিষয়ে সঙ্ঘের শৃঙ্খলা অত্যন্ত কঠোর। সাংগঠনিক সমস্যা নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলা বা অভ্যন্তরীণ তিক্ততা সম্পর্কে বাইরে মুখ খোলা সঙ্ঘের সংস্কৃতির মধ্যে নেই। এবং কিশোর বর্মণ সেই সঙ্ঘ থেকেই বিজেপিতে ঢুকেছেন। যে পদে তিনি রয়েছেন বা যে পদে সুব্রত চট্টোপাধ্যায় রয়েছেন, এই পদে কারা বসবেন, তা বিজেপি মনোনীত করে না, সরাসরি সঙ্ঘ মনোনীত করে।
দীর্ঘ দিন সঙ্ঘের হয়ে কাজ করে আসা নেতাদেরই বিজেপিতে পাঠিয়ে ওই পদ দেওয়া হয়। তাই কিশোর বর্মণের ওই টুইট নিয়ে জোরদার জল্পনা তৈরি হয়। কিশোর বর্মণ এবং অমিতাভ চক্রবর্তীকে তাঁর সহকারী হিসেবে জুড়ে দেওয়া যে সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের পছন্দ হয়নি, সে কথা বিজেপির অনেকেই বলেন। কিন্তু অপছন্দের জেরে সুব্রত কতখানি তিক্ততা বাড়িয়েছেন যে, কিশোর প্রথা ভেঙে এ রকম টুইট করে বসলেন! জল্পনা শুরু হয় তা নিয়েই। যদিও বিতর্ক বাড়ছে বুঝতে পেরে টুইটটি পরে ডিলিট করে দেন কিশোর।
অন্যদিকে, ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টায় বিজেপি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, সুব্রত চট্টোপাধ্যায় নিজের টুইটে ‘বিশেষ বৈঠক’ কথাটা লিখেছেন ঠিকই, কিন্তু শুক্রবার কোনও বিশেষ বৈঠক ছিল না। কেবল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক ভাবে আপ্যায়নের আয়োজন করা হয়েছিল। রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুও বলেন, ‘কে কী টুইট করেছেন দেখিনি। কিন্তু শুক্রবার কোনও বিশেষ বৈঠক ছিল না। বৈঠক থাকলে আমরাও খবর পেতাম। কিন্তু আমাদেরও কিছু জানানো হয়নি। কারণ আসলে কোনও বৈঠকই ছিল না।’ তবে বঙ্গ বিজেপির নেতারা এখন মুখে যা-ই বলুক না কেন, এই ঘটনায় যে বেজায় অস্বস্তি পড়েছেন তাঁরা, তা বলাই বাহুল্য।