গত রবিবার সন্ধ্যায় কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল দিল্লীর জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়। সেদিন সন্ধ্যার পর হঠাতই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবরমতী গার্লস হস্টেলে ঢুকে তাণ্ডব চালায় একদল মুখোশধারি দুষ্কৃতী। রড, লাঠি, ব্যাট দিয়ে আক্রমণ করা হয় পড়ুয়া ও অধ্যাপকদের। যাতে গুরুতর জখম হন ছাত্র সংসদের সভাপতি ঐশী ঘোষ, অধ্যাপিকা সুচরিতা সেন-সহ বহু পড়ুয়া। আর তারপর থেকেই এই ঘটনার নিন্দায় সরব গোটা দেশ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে ছাত্র-যুব থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, বিদ্বজন সকলেই। এবার এই ঘটনার তীব্র নিন্দা শোনা গেল নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের গলায়।
বুধবার কলকাতা বিমানবন্দরে এক বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘জেএনইউ-এর ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে দেশে কোনও ন্যায় নেই।’ জেএনইউ ক্যাম্পাসে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষিকদের ওপর হামলার ঘটনায় তাঁর প্রশ্ন, ‘বহিরাগতরা ঢুকে অত্যাচার করে চলে গেল, কেন বন্ধ করতে পারলেন না জেএনইউ কর্তৃপক্ষ? আবার পরে দেখা গেল, যারা হামলায় আক্রান্ত, তাঁদের বিরুদ্ধেই এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ! সব দেখে মনে হচ্ছে, দেশে ন্যায়-অন্যায়ের মানদণ্ড বিঘ্নিত হচ্ছে।’
গত মঙ্গলবারই বেঙ্গালুরুতে নাম না করে বিজেপিকে নিশানা করেছিলেন অমর্ত্য সেন। তিনি বলেছিলেন, ‘ধর্ম আর জাতির নামে ভাগাভাগি সামাজিক জীবনকে তো পঙ্গু করেই, দেশজুড়ে মেধাও নিম্নগামী হয়।’ এক্ষেত্রে গেরুয়া শিবিরই যে তাঁর নিশানায় ছিল, তা বলাই বাহুল্য। সিএএ-কেও সরাসরি অসাংবিধানিক বলে দাবি করেছিলেন তিনি। তাঁর মতে, দেশের শীর্ষ আদালতের উচিৎ এই আইন বাতিল করে দেওয়া।
সাংবাদিকদের কাছে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘এই অসাংবিধানিক আইনকে সুপ্রিম কোর্টের উচিৎ বাতিল করা।’ তাঁর মতে, ‘নাগরিকত্বের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এমন মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্র, যেখানে কখনও ধর্মীয় ভেদাভেদের গণ্ডি কেটে দেওয়া যায় না।’ পাশাপাশি নাগরিকত্বের বিষয়টিকে ধর্ম থেকে আলাদা করে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন অমর্ত্য সেন। যদিও বরাবরের মতোই এই নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদকে বিঁধতে ছাড়েনি গেরুয়া শিবির। বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাহুল সিনহা বলেছেন, ‘ওনার মতকে গুরুত্বই দিই না, উনি নিজের রাজনৈতিক মতের কথা বলেন। প্রতিটি কথার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। তাই ওনাকে নিয়ে ভাবার কোনও মানেই হয় না।’