সভা চলাকালীন চলে এসেছিল অ্যাম্বুলেন্স। কিন্তু, ডিস্টার্ব হবে, তাই পথ ঘুরে যেতে বলেছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। যখন প্রশ্ন করা হয়, তখন দাম্ভিক সুরে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘যা করেছি ঠিক করেছি।’ ‘ফাঁকা’ ওই অ্যাম্বুলেন্স নাকি তৃণমূল পাঠিয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি। শুধু তাই নয়, বাংলায় অ্যাম্বুলেন্সে সোনা, ড্রাগ পাচার হয়, গুন্ডারা যায়, এহেন সব বিস্ফোরক অভিযোগ করেছিলেন তিনি। তবে ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার বেশি কেটে যাওয়ার পর সত্যি প্রকাশ্যে এল। জানা গেল, ওই অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর আসন্নপ্রসবা এক মহিলা ছিলেন। অ্যাম্বুল্যান্স আটকানোর দায়ে দিলীপ ঘোষের নামে কৃষ্ণনগর কোতয়ালি থানায় দায়ের হল অভিযোগ।
দিনদুয়েক আগে নদীয়ার কৃষ্ণনগরে পথজুড়ে চলছিল নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনে বিজেপি সভা। প্রধান বক্তা দিলীপ ঘোষ বক্তব্য রাখছিলেন। তখনই হঠাৎ এসে হাজির হয় অ্যাম্বুলেন্স। সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চ থেকেই মাইকে দিলীপকে বলতে শোনা যায়, ‘ওদিক দিয়ে ঘুরে যেতে বলো। এখানে অনেকে বসে আছে, ডিস্টার্ব হয়ে যাবে।’ যদিও তখন অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন যথেষ্ট জোরে বাজছিল। যার অর্থ ভিতরে রোগী রয়েছেন। কিন্তু সেসব যুক্তি ধোপে টেকেনি বিজেপি রাজ্য সভাপতির কাছে। কড়া গলায় দিলীপকে বলতে শোনা যায়, ‘ওইটাকে ওদিক দিয়ে ঘোরান। এখানে যাওয়ার জায়গা নেই। অন্যদিক দিয়ে যেতে বলুন। এদিকে যাওয়া যাবে না। ওকে বলুন ওদিকে যেতে। লোক বসে আসে, ডিস্টার্ব হয়ে যাবে।’
দিলীপের এহেন ‘অমানবিক’ আচরণ ঘিরে কার্যত সমালোচনার ঝড় উঠে জাতীয় সংবাদ মাধ্যমেও। বিশেষ করে এই কাজের জন্য একটুও অনুশোচনা প্রকাশ না করেই অহং সহ তিনি যখন বলেন, ‘যা করেছি ঠিক করেছি। আবার করব।’
তবে পরে জানা গিয়েছে, দিলীপের সভা চলাকালীন ওই অ্যাম্বুল্যান্সে ছিলেন ধুবুলিয়ার হরিণডাঙা গ্রামের পাপিয়া বিবি। সেই সময় অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতরে যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন তিনি। ধুবুলিয়া গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে কৃষ্ণনগরে সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু দিলীপ ঘোষের সভার কারণেই আটকে গিয়েছিল তাঁর অ্যাম্বুলেন্স। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে পাপিয়া বলেন, ‘অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছিল পেটে। হঠাৎ টের পেলাম, কারা যেন অ্যাম্বুলেন্স আটকে দিয়েছে। বারবার ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলেও কেউ শোনেনি।’