দিল্লীর লাজপত নগরে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে সভা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি যে পথ দিয়ে সভাস্থলে যান, তার পাশেই এক বহুতলে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতেন দুই মহিলা। তাঁরা বারান্দা থেকে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে ব্যানার ঝুলিয়ে দেন। অমিত শাহের মিছিল চলার সময়েই একদল লোক তাঁদের বহুতলে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে। পরে তাঁদের ওই ভাড়ার ফ্ল্যাট থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।
উচ্ছেদ হওয়া মহিলাদের একজনের নাম সূর্য রাজাপ্পান। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন শুনলাম অমিত শাহ এই পথ দিয়ে নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে সভা করতে যাবেন, স্থির করলাম, প্রতিবাদ করব। সংবিধান আমাদের এই অধিকার দিয়েছে। যদি আমরা বিরোধিতা না করতাম, তাহলে বিবেকের কাছে অপরাধী হয়ে থাকতাম।’
কীভাবে তাঁরা প্রতিবাদ করেছিলেন, সেকথা জানিয়ে রাজাপ্পান বলেন, ‘আমি ও আমার সঙ্গী মিলে ফ্ল্যাটের ব্যালকনি থেকে একটা ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছিলাম। তাতে লেখা ছিল শেম : সিএএ এবং এনআরসি, জয় হিন্দ, আজাদি, এবং নট ইন মাই নেম।’
বিজেপি সমর্থকরা ওই ব্যানার দেখেই ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন। রাজাপ্পানের কথায়, ‘আমাদের প্রতিবাদ দেখে মিছিলের লোকজন চিৎকার করে হুমকি দিতে থাকে, গালিগালাজ করে, নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করতে থাকে। আমাদের অ্যা পার্টমেন্টের ঠিক নীচে প্রায় দেড়শ জন জড়ো হয়। আমরা যে ব্যানারটি টাঙিয়েছিলাম, তা ছিঁড়ে ফেলা হয়। তারা বাড়িতে বলতে থাকে, তোমাদের বাড়িতে ঢুকতে দাও। নইলে দরজা ভেঙে ফেলব।’
একটা ব্যানার দেখে অমিত শাহের অনুগামীরা এই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাবে, রাজাপ্পানেরা ভাবতেই পারেননি। তাঁরা ভয়ে দরজা বন্ধ করে বসেছিলেন। পুলিশ হস্তক্ষেপ না করা পর্যন্ত হুমকি, তর্জন গর্জন চলতেই থাকে।
রাজাপ্পানদের বাড়িওলাও ছিলেন অমিত শাহের অনুগামীদের মধ্যে। তিনি বাইরে থেকে বাড়ির দরজা বন্ধ করে দেন। দুই মহিলা তিন-চার ঘণ্টা ধরে বাড়িতে আটকে থাকেন। ফোনে তাঁরা কয়েকজন বন্ধুকে ডেকেছিলেন। তাঁরা সেই বহুতলের সামনে উপস্থিত হন। জনতা তাঁদের হেনস্থা করে। বাড়িওয়ালা তখনই জানিয়ে দেন, দুই মহিলাকে ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যেতে হবে।
রাজাপ্পানেরা সাত ঘণ্টা ফ্ল্যাটে আটকেছিলেন। পুলিশ বেশ কয়েকবার হস্তক্ষেপ করার পরে দুই মহিলাকে বাড়ি থেকে বেরোতে অনুমতি দেওয়া হয়। তাঁরা জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন।