গতকাল সন্ধ্যায় দিল্লীর জেএনইউ ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছিল এবিভিপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্য। আর এদিন বিকেলে এইমস থেকে ছাড়া পাওয়ার পর হাড় হিম করা সেই পরিস্থিতির বর্ণনা করলেন জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষ। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, হিন্দুত্ববাদী গুন্ডাদের বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াই জারি থাকবে।
এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে ঐশী জানান, ক্যাম্পাসে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের ভিড় দেখে তাঁরা পুলিশকে আগাম জানিয়েছিলেন। কিন্তু, তা সত্ত্বেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। জেএনইউয়ের উপাচার্য জগদেশ কুমারের বিরুদ্ধেও তোপ দেগেছেন ঐশী। তিনি বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল। ওঁরা বলেছিলেন, সব ঠিক আছে। আমরা ওদের সরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু তার পরেই এই ঘটনা ঘটে।’
রবিবার রাত থেকেই শুরু হয় ঐশীকে নিয়ে টানাপড়েন। অবশেষে, সোমবার ঐশীকে ছাড়া হয়েছে হাসপাতাল থেকে। আপাতত, মাথায় ১৬টি সেলাই নিয়ে শয্যাশায়ী তিনি। মাথায় ব্যথা, কথাও বলতে পারছেন না ভাল করে। তবুও, সেই অবস্থাতেই রবিবারের পরিস্থিতি কোথায় পৌঁছেছিল তা জানালেন তিনি। বললেন, ‘রবিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ আমরা পুলিশকে জানিয়েছিলাম যে, আমরা নিরাপদ বোধ করছি না। ক্যাম্পাসে অনেক অজ্ঞাত পরিচয় মুখ জড়ো হয়েছিল।’ ক্যাম্পাসে হামলা চালানোর জন্য অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল বলে আগেই বিবৃতি দিয়েছে জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদ। এ দিন সেই কথাই তুলে ধরেছেন ঐশী। পুলিশকে জানানোর পরও ক্যাম্পাসে হিংসা এড়ানো গেল না কেন? ঐশী অভিযোগ করেছেন, ‘পুলিশ এই বিষয়ে কোনও হস্তক্ষেপই করেনি।’
ঐশীর কথায়, ‘ফি বৃদ্ধি নিয়ে আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলাম। আমরা ওই সমস্যার সমাধান চাইছিলাম। কিন্তু, কিছুক্ষণের মধ্যেই মুখোশ পরা কিছু গুন্ডা সবরমতী হস্টেলের কাছে আমাদের উপর হামলা চালায়।’ ওই ঘটনার পর জেএনইউ ক্যাম্পাসে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় রক্তাক্ত ঐশীর একটি ভিডিও অবধি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। তাতে ঐশীকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘মুখোশপরা গুন্ডারা আমার উপর হামলা চালিয়েছে। আমি রক্তাক্ত। আমাকে নিষ্ঠুর ভাবে মারধর করা হয়েছে।’
জেএনইউ ক্যাম্পাসে গেরুয়া বাহিনীর তান্ডব নিয়ে সরব হয়েছে সিপিএমও। বিজেপি ও আরএসএস-কে নিশানা করে দলের সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘খোদ রাজধানীর বুকে দেশের এক নম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে এই কাণ্ড, প্রশাসন এবং হামলাকারীদের মধ্যে যোগসাজশ ছাড়া হতেই পারে না। বিজেপি-আরএসএসের যে হিন্দুত্বের কর্মসূচি, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে জেএনইউ সর্বদা দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে। সেই কারণেই এমন হামলা।’