চল্লিশ হাজারের গ্যালারি কানায় কানায় পূর্ণ। টসে জিতে রান তাড়া করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। কিন্তু বাধ সাধল বৃষ্টি। তবে ভারত-শ্রীলঙ্কা প্রথম টি-২০ ম্যাচ যে বৃষ্টির কারণেই ভেস্তে গেল, তা বলা ঠিক হবে না। বরং বরসাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামের কিউরেটর ও মাঠকর্মীদের ভুলের কারণেই কোহলি-মালিঙ্গার ডুয়েল থেকে বঞ্চিত হলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
কাল প্রায় ১ ঘণ্টা টানা বৃষ্টি হওয়ার পরে মাঠকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয় আচ্ছাদন সরিয়ে নেওয়ার। কিন্তু আচ্ছাদনের উপরের জল সুপার সপারের সাহায্যে সরিয়ে দেওয়ার আগেই তা তুলে নিতে শুরু করেন মাঠকর্মীরা। বর্ষাপাড়া স্টেডিয়ামে উপস্থিত ক্রিকেটপ্রেমীরা হয়তো ভেবেছিলেন, সুষ্ঠু ভাবেই ম্যাচ শুরু হবে। কিন্তু আচ্ছাদন সরাতেই দেখা যায়, রোলিং মিল প্রান্তের দিকের পিচ ভিজে গিয়েছে। জলের পরিমাণ এতটাই ছিল যে, অন্য প্রান্তে থাকা প্রেসবক্স থেকে তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল।
সুপার সপার চালিয়ে আউট ফিল্ড খেলার উপযুক্ত করা গেলেও, পিচের বেশ কিছু অংশে কাদা হয়ে গিয়েছিল। মাঠকর্মীরা হেয়ার ড্রায়ার ও আয়রন ব্যবহার করেন পিচ শুকানোর জন্য। কাজের কাজ কিছু হয়নি। আম্পায়ার নীতিন মেনন ও অনিল চৌধুরি ৮-১৫ মিনিটে মাঠ পর্যবেক্ষণ করেন। কিন্তু পিচের উপর আঙুল বসে যাচ্ছিল। তাঁরা ফের সিদ্ধান্ত নেন ৯টার সময় মাঠ পরীক্ষা করে দেখবেন। তখনও তাঁরা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। কথা বলেন ম্যাচ রেফারির সঙ্গে। দর্শকদের বিপুল উন্মাদনা দেখে মাঠে নামার জন্য ছটফট করছিলেন ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলি। তিনি নিজেই ড্রেসিং-রুম থেকে বেরিয়ে পিচ দেখতে নেমে পড়েন। কিং কোহলিকে দেখে দর্শকরা আরও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। প্রবল ঠান্ডা উপেক্ষা করেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন দর্শকরা। রাত সাড়ে ন’টার পর ফের পিচের হাল দেখতে নামেন দুই আম্পায়ার। কিন্তু পিচের বেশ কিছু অংশে তখনও আঙুল বসে যাচ্ছিল। তাই তাঁরা কোনও ঝুঁকি নিতে চাননি। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। দ্বিতীয় টি-২০ ম্যাচে মঙ্গলবার ভারত-শ্রীলঙ্কা মুখোমুখি হবে ইন্দোরে।
প্লাস্টিকের আচ্ছাদনের নীচে কাপড়ের আচ্ছাদন দিয়েও ঢাকা ছিল পিচ। তবুও কী করে জল পড়ল তার সরকারি কারণ এখনও জানা যায়নি। আসাম ক্রিকেট সংস্থার সূত্রে খবর, আচ্ছাদনে ছিদ্র ছিল। সেখান থেকেই জল গড়িয়ে পড়ে পিচে। এ বিষয়ে জানতে আসাম ক্রিকেট সংস্থার সচিব দেবজিৎ সইকিয়াকে ফোন করা হলে তিনি অদ্ভুত উত্তর দেন। বলেন, ‘‘রাত ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়। তার জন্যই ম্যাচ পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। ম্যাচ শুরু হওয়ার কথা ছিল সন্ধে ৭টা থেকে। শেষ হওয়ার কথা ছিল রাত ১০টা বেজে ১৫ মিনিটে। বৃষ্টির জন্য পুরোটাই ভেস্তে গেল।’’
এসিএ সচিব আসলে বিষয়টি এড়িয়ে গেলেন। ধারাভাষ্যকার আকাশ চোপড়া মাঠে দাঁড়িয়েই ঘোষণা করেন, ‘‘আচ্ছাদনে ছিদ্র ছিল। সেখান দিয়ে জল ঢুকেছে। এমন শিশুসুলভ ভুল প্রত্যাশিত নয়।’’ বর্ষাপাড়া স্টেডিয়ামের প্রত্যেক সমর্থক সাক্ষী, বৃষ্টি শেষ হয়েছিল ৭টা বেজে ৫০ মিনিটে। কারণ, এক বার আচ্ছাদন সরিয়ে নেওয়ার পরে আর তা ফিরিয়ে আনা হয়নি। তবুও সচিব বলে গেলেন, রাত ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে! সচিবকে ফের জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘টিভিতে ঘোষণা করা হচ্ছে পিচ ভেজা থাকার জন্য ম্যাচ পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। তা হলে আপনি কী করে বলছেন বৃষ্টির জন্যই ম্যাচ পরিত্যক্ত?’’ দেবজিৎ সইকিয়ার উত্তর, ‘‘আমার কোনও ধারণা নেই। কিউরেটর ও মাঠকর্মীদের সঙ্গে আমার কথা হয়নি। তবে আচ্ছদনে জল জমে যাওয়ার কারণে পিচ স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গিয়েছিল।’’ তা বলেই ফোন কেটে দেন সচিব। সচিব ম্যাচের আগের দিন পর্যন্ত বলেছিলেন, ‘‘এই ম্যাচটি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কী ভাবে আয়োজন করছি, তার উপরে নির্ভর করবে আইপিএল-এ আমরা ম্যাচ পাচ্ছি কি না।’’ এই পরিস্থিতির পরে আসাম ক্রিকেট সংস্থা আইপিএল ম্যাচ পাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থাকছে।