আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন। তার মাস দেড়েক আগেই সেখানে বড় ধাক্কা খেল এসএফআই। আজ সন্ধ্যায় কড়া চিঠি লিখে সংগঠন ছেড়ে দিলেন বিদায়ী ছাত্র সংসদের সভানেত্রী-সহ ৩১ জন। ধর্ষণের অভিযোগ থাকা ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া, উপদলীয় কার্যকলাপে প্রশ্রয়, পুরুষতান্ত্রিক, নারীবিদ্বেষ, ব্রাহ্মণ্যবাদ- এই রকম একগুচ্ছ গুরুতর অভিযোগ সিপিএম এবং এসএফআই নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তুলেছেন দলত্যাগীরা। আজ এসএফআইয়ের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক দেবরাজ দেবনাথের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে গণইস্তফা পত্র। সংগঠনের কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদক কল্লোল মজুমদারকেও ইস্তফা পত্রের প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে।
যাঁরা সংগঠন ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছেন, তাঁরা কিন্তু এসএফআই-এর সাধারণ সদস্য নন। বিদায়ী ছাত্র সংসদের সভানেত্রী সোমাশ্রী চৌধুরী-সহ যে ৩১ জন ইস্তফাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন, তাঁদের অধিকাংশই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএফআইয়ের সামনের সারির মুখ। চিঠির শুরুতেই এক ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে নেতৃত্বকে। সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় আঞ্চলিক কমিটির ওই প্রাক্তন সম্পাদকের বিরুদ্ধে শুধু এসএফআইয়ের জেলা কমিটির কাছে নয়, সিপিএমের জেলা নেতৃত্বের কাছেও অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ দল বা ছাত্র সংগঠন করেনি বলেই চিঠিতে লেখা হয়েছে।
শুধু এসএফআই নয়, সিপিএম নেতৃত্বকেও আক্রমণ করেছেন এদিনের দলত্যাগীরা। প্রধানত, তাঁদের আক্রমণের মুখে পড়েছেন কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদক কল্লোল মজুমদার, কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদকীয় সদস্য সুদীপ সেনগুপ্ত ও কৌস্তভ চট্টোপাধ্যায় এবং কলকাতা জেলা কমিটির সদস্য ধ্রুবজ্যোতি চক্রবর্তী। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএফআইয়ের বৈঠকগুলিকে সিপিএমের লোকাল কমিটির বৈঠকে পরিণত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা। জাতপাতের প্রশ্নে সিপিএম নেতৃত্বকে আক্রমণ করেছেন সোমাশ্রীরা। দলিত বা পিছিয়ে পড়ার শ্রেণির কেউ দলের নেতৃত্বে উঠে আসতে পারেন না, সিপিএমে সব বড় পদ এখনও উচ্চবর্ণের দখলে— এমনটাই অভিযোগ এনেছেন বিক্ষুব্ধরা। সিপিএমের সেই প্রবণতাই দলের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের মধ্যে ছড়িয়ে গিয়েছে বলে তাঁরা দাবি করেছেন।
এ ছাড়া সংগঠনের মধ্যে একটি অংশ বহু বছর ধরে প্রভাবশালী উপদল গড়ে তুলেছেন বলে দলত্যাগীরা নিজেদের ইস্তফা পত্রে লিখেছেন। ওই উপদলের অনুগত বা ঘনিষ্ঠ না হলে সংগঠনের নেতৃত্বে পৌঁছনো যায় না— অভিযোগ তাঁদের এমনও। যাঁর উদ্দেশে এই চিঠি লেখা হয়েছে, এসএফআই-এর বিশ্ববিদ্যালয় লোকাল কমিটির সেই সম্পাদক দেবরাজ দেবনাথ নিজেও ওই উপদলের অংশ— এ কথা লিখে কটাক্ষ ছুড়ে দেওয়া হয়েছে দেবরাজের দিকে।
দলত্যাগীদের মতে, ‘এসএফআই বা সিপিএম এখন আর কোনও বিপ্লবী দল নয়, মার্কসবাদের সঙ্গে এই দল বা সংগঠনের কোনও সম্পর্ক নেই।’ এদিকে আজকের ঘটনায় চাপে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগে এসএফআইয়ের সংগঠন যথেষ্ট মজবুত ঠিকই। কিন্তু একসঙ্গে এত জনের দলত্যাগের ধাক্কা ভোটের মুখে সামলানো খুব সহজ নয়।
বিষয়টি নিয়ে সিপিএম এবং এসএফআই নেতৃত্ব যথেষ্ট অস্বস্তিতে। সিপিএমের কেউ এখনও মুখ খোলেননি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠনের এই ভাঙন প্রসঙ্গে। এসএফআই নেতা দেবরাজ দেবনাথও এ বিষয়ে সংগঠনের বাইরে মুখ খুলতে অস্বীকার করেছেন। কিন্তু যাঁরা সংগঠন ছাড়লেন, তাঁরা নিজেদের ইস্তফা পত্রের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন ইতিমধ্যেই।