ডিটেনশন ক্যাম্পের নাম উঠলেই এনআরসি আতঙ্ক ঘিরে ধরছে দেশের সাধারণ মানুষকে। আসামের ডিটেনশন শিবিরে বন্দি লোকজনের দুর্দশার যে ছবি সামনে এসেছে, তা দেখে রীতিমতো শিউরে উঠেছে দেশ। আর বিজেপির দিকেও বুমেরাং হয়ে দেখা দিয়েছে এনআরসি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অবশ্য দাবি করেছেন, দেশে কোনও ডিটেনশন ক্যাম্প নেই। যদিও এই পরিস্থিতিতে আসামের গোয়ালপাড়ার ডিটেনশন ক্যাম্পে মৃত্যু হল আরও এক ‘বিদেশির’। এই নিয়ে মোট ২৯ জনের মৃত্যু হল ডিটেনশন ক্যাম্পে। এর মধ্যে অনেকেই ডিটেনশন শিবিরে অসুস্থ হয়ে, তারপরে হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা গিয়েছেন।
জানা গিয়েছে, মৃতের নাম নরেশ কচ। তাঁর বয়স ৫০ বছর। পরিবারের অভিযোগ, দিনসাতেক আগে ডিটেনশনের ক্যাম্পের শৌচাগারে আচমকাই জ্ঞান হারান নরেশ। তাঁকে গোয়ালপাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। কিন্তু শুরু থেকেই এই ঘটনা নিয়ে বাকিকে অন্ধকারে রাখতে চেয়েছিল আসাম প্রশাসন। ওই রাতেই নরেশের দেহ সৎকারের নির্দেশ দেওয়া হয়। যদিও পুলিশের তরফে কোনও সহযোগিতা মেলেনি বলেই খবর। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, ২২ নভেম্বর পর্যন্ত আসামের ছ’টি ডিটেনশন সেন্টারে ৯৮৮ বিদেশি বন্দি রয়েছেন। বন্দিদের মধ্যে ক’জন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু, সে সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে মন্ত্রীর জবাব ছিল, তিনি জেনে, জানাবেন।
এরই মধ্যে ঘটে নরেশের মৃত্যুর ঘটনা। পরিবারের দাবি, ২০১৭ সালের মার্চ মাসে নরেশকে ‘বিদেশি’ বলে চিহ্নিত করে আসাম প্রশাসন। তবে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও মামলা দায়ের হয়নি। মৃতের স্ত্রী জানিয়েছেন, ১৯৬৪ সালে আসামে এসেছিলেন নরেশ। এনআরসিতে সমস্ত নথিও জমা করেছিলেন। তারপরেও তাঁকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি। গত জুন মাস থেকে তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয়।
এই মৃতের তালিকায় ৪৫ দিনের শিশু থেকে ৮৬ বছরের প্রবীণ ব্যক্তিরা রয়েছেন। মৃত লোকজনের মধ্যে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে ৩ বছর আগে ক্ষমতায় আসা বর্তমান বিজেপি সরকারের আমলে। এই মৃতের তালিকায় রয়েছে ১২ হিন্দু ও ১৩ মুসলিম। মৃত অপর ব্যক্তি অন্য সম্প্রদায়ের। আসামের এই ৬টি বন্দিশালা বা ডিটেনশন সেন্টার বিদেশিদের, বিশেষ করে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের বন্দি রাখার জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
৩১ আগস্ট অসামের নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ করা হয়। তালিকা প্রকাশের আগে থেকেই এনআরসির বিরোধিতা করে আসছিল বিরোধীরা। তালিকা প্রকাশের পর এনআরসি-র বিরুদ্ধে সুর চড়ায় বিজেপিও। রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা সেই সময় বলেছিলেন, যখন এতজন প্রকৃত ভারতীয় তালিকার বাইরে, তখন কী ভাবে বলা যায় যে এই নাগরিকপঞ্জি আসামের মানুষের মঙ্গল করবে? কিন্তু সেই বিষয়ে কেন্দ্র একেবারে নিশ্চুপ।