সদ্যই শেষ হয়েছে ২০১৯ সাল। কিন্তু বিগত বছরে গাড়ির বাজারের রাহুমুক্তি তো ঘটেইনি, বরং গত দু’দশকের মধ্যে ২০১৯ সালেই সবচেয়ে বেশি মন্দার কবলে পড়েছে দেশের গাড়ি শিল্প। প্রায় প্রতিটি সংস্থার গাড়ি বিক্রি কমেছে। গত ডিসেম্বরেই টাটা মোটরস, হোন্ডা কারস ইন্ডিয়া, মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা, মারুতি সুজুকি ইন্ডিয়া, টয়োটা কির্লোস্কর, অশোক লেল্যান্ড জানিয়েছিল তাদের বিক্রি কমে যাওয়ার কথা। চাহিদার অভাবে পর্যায়ক্রমে উৎপাদন বন্ধও রেখেছে মারুতি, টাটা, মাহিন্দ্রা। একের পর এক সংস্থার গাড়ির শো-রুম বন্ধ হয়েছে, সেই সঙ্গে গাড়ি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রচুর মানুষ কর্মহীন হয়েছেন। গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির সংস্থাগুলিই ইতিমধ্যে প্রায় তিন লক্ষ কর্মী ছাঁটাই করেছে। এবার সেই তালিকায় যোগ দিতে চলেছে গাড়ির যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারী জার্মান সংস্থা রবার্ট বশ জিএমবিএইচ। জানা গেছে, কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করছে সংস্থার ভারতীয় শাখা।
ভারতে বশ-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৌমিত্র ভট্টাচার্য বলেন, ‘আগামী চার বছর ধরে প্রায় ২,০০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে জার্মান সংস্থাটি। সংস্থার শীর্ষ স্থানীয় ৩,৭০০ কর্মীর ১০ শতাংশ এবং মিড লেভেল ৬,৩০০ কর্মীর মধ্যে ১০ শতাংশের সামান্য বেশি কর্মী ছাঁটাই করা হবে।’ তাঁর কথায়, ‘আমাদের সংস্থা মন্দার কবলে পড়ার আগেই অভ্যন্তরীণ পরিচালন ব্যবস্থায় বদল ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ জানা গিয়েছে, গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে বশ-এর মুনাফা ২০১৮ সালের একই সময়ের তুলনায় ৬৬ শতাংশ কমেছে। ভারতে নয়া দূষণ নির্গমন বিধি, বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির বিস্তার, নগদের অভাব এবং অর্থনৈতিক মন্দায় গাড়ির বিক্রি কমতে শুরু করেছে বলে দাবি বশের। আগামী দু’-তিন বছরের মধ্যে তা বাড়বে না বলেই মনে করছে তারা।
উল্লেখ্য, অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রির তথ্য বলছে, যাত্রীবাহী গাড়ি, ভ্যান, এসইউভি গাড়ির বিক্রি অস্বাভাবিকভাবে পড়ে গিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মারুতি, হন্ডাই, মাহিন্দ্রা, টাটা, হন্ডা এবং টয়োটা। গাড়ি শিল্পে এই মন্দার ছবি শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের মধ্যভাগ থেকে। কিন্তু ২০১৯ সাল যত এগিয়েছে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে। তারপর রাজনৈতিক অস্থিরতা, লোকসভা ভোটের সময় থেকে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির শ্লথতার প্রভাবে অটোমোবাইল সেক্টরের অবস্থা আরও করুণ হয়। এছাড়া এনবিএফসি ইস্যু, বেকারত্ব ইত্যাদির কারণে গাড়ি বাজারে চাহিদা তলানিতে ঠেকে। এই পরিস্থিতিতে হন্ডা কারস-এর মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস ডিরেক্টর রাজেশ গোয়েল বলছেন, এখনও কঠিন সময়ই চলছে। গাড়ি বাজার একেবারেই নিম্নমুখী। এই চাপ কাটিয়ে উঠতে আরও কয়েকটি ত্রৈমাসিক বা চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।