বছর পাঁচেক আগে বারাণসী কেন্দ্র থেকে জিতেই সংসদে গিয়েছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনেও এই কেন্দ্র থেকে বিপুল ভোটে জয় পেয়েছেন তিনি। কিন্তু সেই বারাণসীতেই নাকি বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৩৫৯ দিনই জারি ১৪৪ ধারা! বৃহস্পতিবার এ নিয়েই এক টুইট করেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তারপরই প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ক্ষেত্রের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তুমুল তরজা শুরু হয়েছে।
মোদীকে নিশানা করে প্রিয়াঙ্কা তাঁর টুইটারে লেখেন, ‘২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর নিজের কেন্দ্র বারাণসীতে ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৩৫৯ দিন ১৪৪ ধারা জারি ছিল। তাহলে তিনি কীভাবে বলছেন যে, কারও কিছু নিয়ে ভয় পাওয়ার কারণ নেই?’ শুধু তাই নয়। এর পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি রিপোর্টকেও এই টুইটের সঙ্গে ট্যাগ করে দিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা।
ওই প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, বারাণসীর পরিস্থিতি বেশ থমথমে। কেউই মন খুলে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। শহরের প্রায় প্রতিটি মোড়েই উর্দিধারীদের কড়া নজর। নাগরিকত্ব আইন ও নাগরিকপঞ্জী নিয়ে দেশজোড়া বিতর্ক শুরু হতেই প্রশাসনের সক্রিয়তা অনেকটা বেড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, খালি চোখে সবটাই স্বাভাবিক চলছে বলে মনে হতে পারে। কিন্তু, প্রাচীন শহরের প্রধান ছন্দটাই কোথায় যেন কেটে গিয়েছে।
বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই পাপ্পু’র চায়ের দোকান। রাজনৈতিক চর্চার জন্য এর বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। কাশীনাথ সিং, বলরাজ পাণ্ডে, চৌকিরণ যাদবের মতো প্রখ্যাত সব হিন্দি সাহিত্যিকেরা এখানে নিয়মিত আসতেন। প্রধানমন্ত্রী ভিপি সিংয়ের আমলে সমাজবাদী নেতা জর্জ ফার্নান্ডেজ এখানে বসেই প্রায় দু’ঘণ্টা সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন। রাজনৈতিক চর্চার এমন একটি প্রাণকেন্দ্রেও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে কেউ রা কাড়ছেন না।
তবে রাখঢাক না করেই বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রজত কুমার বলেন, আতঙ্কে পরিবেশ রয়েছে। নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসির বিরোধিতায় নিজের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রত্যাখ্যান করেছেন রজত। তিনি জানান, ‘এখন পাপ্পুর চায়ের দোকানে আসতে ও রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতে সকলেই ভয় পায়। সবাই সবাইকে সন্দেহের চোখে দেখছে।’ তাঁর সাফ কথা, ‘২০১৯ সালে ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৩৫৯ দিনই বারাণসীতে ১৪৪ ধারা জারি ছিল। একজন কীভাবে মন খুলে কথা বলবেন?’