একদিকে রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে উন্নয়নের আলো পৌঁছে দিতে একের পর এক প্রকল্প হাতে নিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে, রাজকোষে টানাটানির দোহাই দিয়ে এবার গ্রামের উন্নয়নের খরচেই কোপ বসাতে চলেছে মোদী সরকার।
বাজেটের অঙ্ক কষতে বসে অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের আশঙ্কা, ঘাটতি লাগামে রাখতে হলে গ্রামোন্নয়নের খরচেই কাটছাঁট করতে হবে। কারণ, অর্থনীতির ঝিমুনির ফলে আয়কর বা জিএসটি থেকেও সরকারের আয় কমছে।
এমনিতেই ১০০ দিনের কাজ বা মনরেগা ও প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনা প্রকল্পে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে কম অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু মনরেগা-য় গ্রামে যে পরিমাণ কাজের চাহিদা তৈরি হচ্ছে, তাতে আরও অর্থ দরকার। অথচ কীভাবে খরচে রাশ টানা যায়, অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা সে পথ খুঁজছেন।
উল্লেখ্য, লোকসভা ভোটের আগে চাষিদের বছরে ৬ হাজার টাকা করে দেওয়ার ‘পিএম-কিসান’ প্রকল্প ঘোষণা করেছিল মোদী সরকার। ক্ষমতায় ফেরার পরে সেই খরচেও রাশ টানা হচ্ছে। চলতি অর্থ বছরে দুই কিস্তিতে মাথা পিছু ৪ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় কিস্তির টাকা দেওয়ার কথা ছিল ডিসেম্বরে। কিন্তু এখনও মেলেনি সেই টাকা।
কবে মিলবে? সরকারি সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৃহস্পতিবার কর্নাটকে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর টুমকুরে অনুষ্ঠান থেকে ৬ কোটি চাষির অ্যাকাউন্টে ২ হাজার টাকা করে পাঠানো হবে। খরচ হবে ১২ হাজার কোটি টাকা।
প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। কারণ, ভোটের আগে এই খাতে প্রথম টাকা পান ৮ কোটি ৫ লক্ষ চাষি। এই অর্থ বর্ষের এপ্রিলে তা পেয়েছেন ৭.৪৩ কোটি চাষি। পরের কিস্তিতে ৫.৯১ কোটি চাষি। এ বার ৬ কোটি চাষি।
তাহলে বাকিরা কোথায় গেলেন? সরকারের যুক্তি, চাষের জমির রেকর্ড, আধার-ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সংযুক্তিকরণের সমস্যা হচ্ছে। তবে চাষিদের মাথায় হাত পড়লেও অর্থ মন্ত্রকের স্বস্তির কারণ হল, ৭৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ বেঁচে যাবে।
একই ছবি ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পেও। গত অর্থ বছরে এই খাতে ৬১,০৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। এ বছর বরাদ্দ হয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু গ্রামে গ্রামে কাজের চাহিদা বাড়ছে। তাই গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক অর্থ মন্ত্রকের কাছে আরও ২০ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে। কিন্তু সাড়া নেই। অর্থ মন্ত্রক চাইছে, আপাতত রাজ্যগুলি টাকা মিটিয়ে দিক। পরে ধার শোধ করে দেওয়া যাবে।
গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘মোদী সরকারের প্রথম তিন বছরে ১০০টি পরিবার কাজ চাইতে এলে ৮৯-৯০টি পরিবারকে মনরেগা-য় কাজ দেওয়া গিয়েছে। কিন্তু গত দু’বছরে তা ৮৪ শতাংশে নেমেছে। এ বছর বোধহয় আরও কম পরিবারকে কাজ দেওয়া সম্ভব হবে।’