বিশ্ব ক্রিকেটে শেষ হল একটি ঘটনাবহুল বছর। গোটা বছরে আইসিসি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই বছর বিশ্বকাপের ফাইনালে সুপার ওভারে টাই হওয়ার পর শুধুমাত্র বেশি বাউন্ডারি মারার জন্য ইয়ন মরগ্যানের নেতৃত্বাধীন ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হয়। টুর্নামেন্ট শুরুর মুখে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্রিকেটবোদ্ধারা কোনও প্রশ্ন তোলেননি। তবে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ফাইনালে সুপার ওভার টাই হওয়ার পর বেশি বাউন্ডারি মারার নিয়মে ইংল্যান্ডের চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিয়ে তোলপাড় হয় ক্রিকেট বিশ্ব। চাপে পড়ে ভবিয্যতে আইসিসি ট্রফিতে এই রকম নিয়ম আর রাখা হবে না বলে জানান সংশ্লিষ্ট শীর্ষ আধিকারিকরা।
বিশ্ব ক্রিকেটে ২০১৯ সালে ধাঁধা হলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। বিশ্বকাপের পর তিনি দেশের হয়ে খেলেননি। এমনকী, ঝাড়খণ্ড ক্রিকেট থেকে শতযোজন দূরে মাহি। তবে মাঝেমধ্যেই দিল্লী কিংবা মুম্বইতে স্পনসরদের অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকেন। এমন একটি অনুষ্ঠানেই তিনি জানিয়েছেন, জানুয়ারির আগে ক্রিকেট নিয়ে কথা বলায় তাঁর ইচ্ছে নেই। তবে গত শনিবার ‘ধোনি-ধাঁধা’ নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করেছেন সৌরভ গাঙ্গুলি। বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন,‘বিশ্বকাপের পর ধোনি আর ক্রিকেট খেলেনি। ওই প্রতিযোগিতায় ধোনির পারফরম্যান্স ভালোই ছিল। বোর্ড সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর ওর সঙ্গে কথা হয়নি। ধোনি তো বলেছে, জানুয়ারির পর ক্রিকেট নিয়ে কথা বলবে। দ্বিতীয় এমএস ধোনিকে দেশ এখনই পাবে না। ও চ্যাম্পিয়ন পারফর্মার।
সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত প্রশাসনিক কমিটি যখন ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের দায়িত্বে, তখন গোলাপি বলে টেস্ট খেলার জন্য ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু ওই কমিটি সেই প্রস্তাব নিয়ে তেমন উৎসাহ দেখায়নি। ব্রিজেশ প্যাটেলকে টপকে সৌরভ নাটকীয়ভাবে বোর্ড প্রেসিডেন্ট হন অক্টোবরে। এরপরেই ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলির সঙ্গে তাঁর কয়েক মুহূর্তের আলোচনাতেই নেওয়া হয় ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। গোলাপি টেস্ট খেলতে রাজি হয় টিম ইন্ডিয়া। গত ২২ নভেম্বর ক্রিকেটের নন্দনকানন ইডেন গার্ডেন্সে ভারতীয় ক্রিকেট টিম প্রথম ‘গোলাপি টেস্ট’ খেলতে নামে।
২০১৫ এবং ২০১৯ বিশ্বকাপে ভারত সেমি-ফাইনালে বিদায় নিয়েছে। ২০১৬ সালে টি-২০ বিশ্বকাপেও ভারত হেরে যায় শেষ চারের লড়াইয়ে। কিন্তু বছরের শেষে ভারতীয় দলের পারফরম্যান্স খতিয়ে দেখে বোঝা যাচ্ছে, বিরাটই ক্রিকেট মাঠের রাজা। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট জয় ভিকে-ব্রিগেডের সেরা কীর্তি। আর ব্যাট হাতে তিন ধরনের ফরম্যাটেই সফল বিরাট কোহলি। এই বছরে সবথেকে বেশি রান করেছেন তিনিই (২৪৫৫)। ভারতের সহ-অধিনায়ক রহিত শর্মা তিন ধরনের ফরম্যাটে করেছেন ২৪৪২ রান। দু’জনের প্রতাপে ভারত বিশ্ব ক্রিকেটে ছড়ি ঘুরিয়েছে। বিশ্বকাপটি পেলে সোনায় সোহাগা হত দেশের ক্রিকেটের। ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে ২-১ ব্যবধানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে তাদের বিরুদ্ধে টানা দশটি সিরিজ জেতার কীর্তিও গড়েছে টিম ইন্ডিয়া। সাসপেন্ড থাকায় বছরের প্রথম চার মাস পর স্টিভ স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন। রান সংগ্রহের নিরিখে ভারত অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়কের থেকে অনেক পিছিয়ে তাঁরা। তবে স্মিথ সাসপেনসন কাটিয়ে টেস্টে দেখিয়েছেন ধারাবাহিকতা। ডেভিড ওয়ার্নার আবার টেস্টের থেকে বেশি উজ্জ্বল ছিলেন ওয়ান ডে ক্রিকেটে। ২০২০ মরশুমে বিরাট-রহিতের সঙ্গে বাইশ গজে স্টিভ স্মিথ ও ওয়ার্নারের লড়াই জমবে বলে ক্রিকেটবোদ্ধারা আশা করছেন। ২০১৯ সালের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, ভারতের পেস ব্যাটারির অপ্রতিহত বোলিং। বিশ্বের সেরা পেস অ্যাটাক এখন ভারতেরই।